Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

হাসপাতালে হয়রান রোগী, গ্রামে ‘ক্লিনিক’ জুনিয়রদের

শুধু হাসপাতাল ভবনের পাঁচ তলাতেই নয়, চার তলায় থাকা স্ত্রী এবং প্রসূতি ও শিশু বিভাগ কিংবা ছ’তলার জেনারেল মেডিসিন বিভাগেও রোগীদের লম্বা লাইন। ন’তলার নাক-কান-গলা বিভাগেও ভিড়ে ঠাসা রোগী।

(বাঁ দিকে) মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট সংগ্রহ করতে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভিড়। মালদহের মানিকচকের মথুরাপুর জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলে ‘অভয়া ক্লিনিক’-এ মালদহ মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা (ডান দিকে)। মঙ্গলবার।

(বাঁ দিকে) মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট সংগ্রহ করতে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভিড়। মালদহের মানিকচকের মথুরাপুর জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলে ‘অভয়া ক্লিনিক’-এ মালদহ মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা (ডান দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: জয়ন্ত সেন।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৪
Share: Save:

মঙ্গলবার বেলা ১২টা। সাদা রঙের মলিন হয়ে যাওয়া জামা ও চেক লুঙ্গি পরে মালদহ মেডিক্যালের বহির্বিভাগের সার্জারি বিভাগের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের আনিকুল ইসলাম। লাইন এতটাই লম্বা যে মাঝেমধ্যে মেঝেতে বসেও পড়ছেন তিনি। আনিকুল বললেন, ‘‘বৈষ্ণবনগর থেকে সকাল ৮টায় বাসে উঠে সাড়ে ন'টার মধ্যে মেডিক্যালে পৌঁছেছি। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে সার্জারি বিভাগের লাইনে দাঁড়িয়েছি সাড়ে ১০টা নাগাদ। সে সময় চিকিৎসক ছিলেন না। ১১টা নাগাদ এসে এক জন চিকিৎসক রোগী দেখে যাচ্ছেন। আমি যে কখন দেখানোর সুযোগ পাব, জানি না।’’

শুধু হাসপাতাল ভবনের পাঁচ তলাতেই নয়, চার তলায় থাকা স্ত্রী এবং প্রসূতি ও শিশু বিভাগ কিংবা ছ’তলার জেনারেল মেডিসিন বিভাগেও রোগীদের লম্বা লাইন। ন’তলার নাক-কান-গলা বিভাগেও ভিড়ে ঠাসা রোগী। রোগীদের অভিযোগ, একেই প্রতিটি বিভাগে রোগীদের ভিড়, তার উপরে চিকিৎসকের সংখ্যা কম থাকায় বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসে নাজেহাল অবস্থা। দু’বছরের শিশুকে নিয়ে বহির্বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন গাজলের করকচ থেকে জয়শ্রী রাজবংশী। তিনি বলেন, ‘‘বেলা ১১টা থেকে শিশু কোলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। একই প্রচণ্ড গরম, তার উপর ভিড়ে ঠাসা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডাক্তারকে কখন দেখাতে পারব জানি না।’’ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার প্রসেনজিৎ বর বলেন, ‘‘প্রতিদিনই বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি করায় সিনিয়র চিকিৎসকেরা রোগীর দেখছেন। সিনিয়র চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাঁদের অন্তর্বিভাগ, অস্ত্রোপচার ও ‘অন কল’ ডিউটি থাকায় বহির্বিভাগের কোনও কোনও বিভাগে যেতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে কোন রোগীকে ফেরানো হচ্ছে না।’’

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ও ন্যায়বিচারের দাবিতে মালদহ মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলেও তাদের একাংশ মালদহের মানিকচক ব্লকের মথুরাপুর জুনিয়র গার্লস হাই স্কুল ও মথুরাপুর ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুলে মঙ্গলবার সকাল থেকে 'অভয়া ক্লিনিক' খুলে গ্রামবাসীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, স্ত্রী ও প্রসূতি, শিশু, নাক-কান-গলা, দাঁত, মেডিসিন বিভাগ-সহ অন্তত ১২টি বিভাগের জুনিয়র চিকিৎসকেরা এ দিন রোগীদের দেখার পাশাপাশি তাদের ওষুধও বিলি করেন। এ দিন ওই শিবিরে এক হাজারেরও বেশি রোগী পরিষেবা পেয়েছেন। চিকিৎসকদের পক্ষে মনীষা সাহা বলেন, "আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ ভাবেই ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুলে গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছি। হবিবপুর ব্লকের আইহোতেও একই ভাবে আমরা পরিষেবা দিয়েছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE