ই-রিকশার দাপটে জেরবার মালদহের ইংরেজবাজার শহর। প্রতিদিন সকাল হতেই হাজার হাজার ই-রিকশা দখল করে নিচ্ছে শহরের ব্যস্ততম রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলির। বিশেষ করে স্কুল বা অফিস টাইমে ই-রিকশার দাপটে যানজট বাধছে শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। যা সামাল দিতে ট্র্যাফিক পুলিশের হিমসিম অবস্থা।
একই পরিস্থিতি পাশের পুরাতন মালদহ শহরে। অভিযোগ, দুই শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য যে পরিমাণ ই-রিকশাকে সরকারি রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়, তার চেয়ে অন্তত চার গুণ ই-রিকশা অবৈধ ভাবে চলাচল করছে। অভিযোগ, জাতীয় সড়ক, এমনকী রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে ই-রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ও একাধিক রাজ্য সড়কে দেদার চলছে ই-রিকশা। পরিবহণ দফতর থেকে শুরু করে পুলিশ গাড়ি ধরে জরিমানা আদায় করলেও পরিস্থিতির বদল নেই।
মালদহ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “শহরে যানজটের সমস্যা মেটাতে ই-রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নতুন করে ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ রয়েছে জেলায়। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় ই-রিকশা চলাচলের জন্য রুট তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। সেই রুট রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে অনুমোদিত হয়ে এলেই কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ ভাবে চলাচলকারী ই-রিকশা ধরপাকড় চলছে নিয়মিত।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় ৭,৯৯৪টি ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। তার মধ্যে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ শহরে চলাচলের জন্য মাত্র ৩,২৮১টি ই-রিকশাকে বিশেষ স্টিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিদিন দুই শহরে অন্তত ১৫ হাজার ই-রিকশা চলাচল করছে। আশপাশের গ্রাম থেকেই যাত্রী নিয়ে শহরে ঢুকে পড়ছে ই-রিকশা। অভিযোগ, নম্বর প্লেটই নেই এমন ই-রিকশাও চলছে শহরে। বিশেষ করে রাতের দিকে ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি শিথিল হলে সেই নম্বর প্লেটহীন ই-রিকশার চলাচল বাড়ে। আর বেহিসেবি ই-রিকশা চলায় যানজটে জেরবার হচ্ছে শহরের বিভিন্ন রাস্তা।
গাজলে একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন মকদুমপুরের অজয় ঘোষ। তিনি বলেন, “অফিস যাওয়ার জন্য প্রতিদিন আমাকে সকাল দশটার মধ্যে রথবাড়ি মোড়ে এসে বাস ধরতে হয়। সে সময় রথবাড়ি চত্বরে এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে যে নির্দিষ্ট সময়ে বাস ধরাই মুশকিল হয়ে পড়ে।” দেশবন্ধুপাড়ার এক বধূ শেফালি সরকার বলেন, “সকাল বা দুপুর কোনও সময়ে রাজমহল রোড ফাঁকা থাকে না। ই-রিকশার এমন দাপট যে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটাই দায়। যানজটের আতঙ্কে অন্তত আধ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বেরোতে হয়। কিন্তু প্রশাসন বা পুলিশ এই সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করছে না।” এক ই-রিকশা চালক রথীন দাস বলেন, “পেটের দায়ে ই-রিকশা চালাতে হয়। গ্রামে যাত্রী সে ভাবে মেলে না, ফলে শহরে এসেই ই-রিকশা চালাই।” ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “ই-রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিষয় প্রশাসন দেখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুট বেধে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)