কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হল। এ বছর বাজেটের কয়েক মাস আগে থেকে রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরি নিয়ে নানা মহলে চর্চা চলছিল। উত্তরবঙ্গের সাংসদদের একাংশও এমস তৈরির দাবিতে সরব ছিলেন। কিন্তু, এই বাজেটেও এমসের আশা পূরণ হল না। রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরি হতে পারত। কিন্তু, বাজেটে সে জন্য কোনও বরাদ্দই করা হয়নি।
গত ১০ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গের এক সাংসদ রায়গঞ্জে সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরবঙ্গেই রাজ্যে দ্বিতীয় এমস তৈরি হবে বলে দাবি করেছিলেন। তার আগে উত্তরবঙ্গের আরও এক সাংসদও একই দাবি করেন। গত বছরের নভেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানান আরও এক সাংসদ।
বাজেটের মুখে এমস নিয়ে সাংসদদের এত তৎপরতা দেখে ভাল লেগেছিল। আশা করেছিলাম, ফের হয়তো নতুন করে রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরির জন্য বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ঘোষণা বা টাকা বরাদ্দ করবে। কারণ, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দুঃস্থ পরিবারের মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে কলকাতা বা রাজ্যের বাইরের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই, রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরি করা হলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অসম ও বিহারের বহু মানুষ সেখানে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারতেন।
২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রায়গঞ্জে এমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির অনুমোদন দেওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ জুড়ে সাধারণ মানুষ আনন্দে মেতেছিলেন। ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু, এর পরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার জেরে ওই হাসপাতাল কল্যাণীতে চলে যায়। তা উত্তরবঙ্গের কাছে খুবই হতাশাজনক।
অতীতে বিভিন্ন ভোটের সময়ে এমস নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। এমসের দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু, রায়গঞ্জ আজও ওই হাসপাতাল পায়নি। রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার স্বার্থে রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রের একযোগে এগিয়ে আসা উচিত। কল্যাণীতে এমস হয়েছে ভাল কথা। কলকাতায় অনেক ভাল হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু, উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল-সহ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও সেগুলিতে অনেক বিভাগ এখনও চালু হয়নি। ফলে, বহু রোগীকে কলকাতা ও ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে বহু রোগী সমস্যায় পড়েন। অনেকে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের উপরে ভরসা করে চিকিৎসা করান। তাতেও অনেক সমস্যা হয়। রাজ্য ও ভিন রাজ্যের অনেক নামী হাসপাতালে ওই কার্ডে পরিষেবা মেলে না। তাই, উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বার্থে দ্রুত রায়গঞ্জে এমস হাসপাতাল তৈরি হওয়া উচিত।
লেখক সাধারণ সম্পাদক,পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)