উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
পার্ট ওয়ানের এক ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁকে কলেজের একটি সমাজ মাধ্যমের গ্রুপে এ দিন ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ এক ছাত্র-নেতা ‘অপদার্থ’ বলেছে, হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রীটি বলেন, ‘‘কলেজের অভ্যন্তরের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরায় আমাকে অপদার্থ বলে বদনাম করা হয়েছে। কেন বলা হল তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। যারা কলেজে এ সব করছে, তাদের চিহ্নিত করে তাদের নাম নথিভুক্ত করা হোক।’’
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যক্ষকে ঘেরাওয়ে জড়ো হওয়া পড়ুয়ারা তা সমর্থন করে হই-হই করে ওঠেন। অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা তখন বসে। পাশে বসে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অধ্যক্ষের ঘরে তখন কয়েকশো পড়ুয়ার ভিড়। ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেছেন তাঁরা। তার আগে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক শেষ করে তাঁদের অনুরোধে কথা বলতে সেখানে রয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান তথা মেয়র গৌতম দেব। এমবিবিএস এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি পড়ুয়ারা সঙ্গে আনা গোটা ত্রিশ অভিযোগ পড়ে শোনান। মৌখিক অভিযোগও তোলা হচ্ছে।
তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘‘পেডিয়েট্রিক বিভাগে টিএমসিপি-র এক পড়ুয়া ডিউটিতে নিয়মিত আসছেন না দেখে বলেছিলেন পিজিটি এক ছাত্রী। তাঁকে হুমকি করা হয়।’’ ব্যবস্থা নিতে ফের সরব হন পড়ুয়ারা।
মঙ্গলবার কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন এক পড়ুয়া এবং নেফ্রোলজি বিভাগীয় প্রধান অর্পিতা রায় চৌধুরী। পড়ুয়ারা চিৎকার করে উঠে দাবি তোলেন, ‘‘এঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর করতে হবে। খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এঁরা অভীক দে-র ঘনিষ্ঠ। তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ওঁদের গোষ্ঠীকে এখনই অবৈধ ঘোষণা করা হোক।’’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘অবৈধ বলব কী ভাবে? কলেজে কোনও ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন হয়নি।’’ ছাত্রেরা হই-হই করে ওঠেন প্রতিবাদে।
অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলে কাজ থাকায় মেয়র বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘‘অভীক দে বলে এক জনের নাম উঠছে। জানি না, কোন হরিদাস পাল! পড়ুয়াদের অভিযোগ দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমার নম্বর পড়ুয়াদের দিয়ে এসেছি। তাঁরা ডাকলেই, আমি চলে আসব।’’
ততক্ষণে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন। এমবিবিএস-এ ভর্তির জন্য নতুন পড়ুয়া অভিভাবকেরাও এসেছেন প্রশাসনিক ভবনে। কিছু ক্ষণের মধ্যে ডিন সন্দীপ সেনগুপ্তকে ছাত্রেরা নিয়ে আসেন অধ্যক্ষের ঘরে।
এক ছাত্র অভিযোগ তোলেন, ‘‘আপনি নম্বর বাড়ানোয় মদত দিতেন। আপনাকে ফোন করত, আপনি বেরিয়ে যেতেন পরীক্ষা হল থেকে।’’ ডিন বলেন, ‘‘অভীক দে ফোন করত। বার বার ফোন ধরা সম্ভব নয় পরীক্ষা হলে থাকলে। তাই বেরোতাম।’’ ছাত্রেরা বলেন, ‘‘আপনি তাদের নাম করুন।’’ ডিন বলেন, ‘‘অভীক ছাড়া, কেউ ফোন করেনি।’’ ছাত্রেরা চিৎকার করতে থাকে, ‘‘বলুন, নামগুলো বলুন। পাপ কমবে কিছুটা।’’
সেখানে হাজির চিকিৎসক শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘ডিনের কথা মেনে তিনি ফোন ধরতেন। পরীক্ষা হল থেকে বার হয়ে আসতেন। এর দায় নিয়ে তিনি, অধ্যক্ষ, সহকারি ডিন পদত্যাগ করুন।’’ বাকি ছাত্ররা সেই দাবিতে সরব হন। তাঁদের পাশে ছিলেন চিকিৎসক মেহেদি হাসান রহমান। আরও কয়েকটি নাম বলেন ডিন। দাবি করেন, ‘‘কোনও দিন কারও নম্বর বাড়াইনি।’’ ছাত্রেরা বলেন, ‘‘যখন আর জি করের মেয়েটি মারা যায়, পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করে, আপনি তাদের ডেকে বলতে বলেন, ‘সন্দীপ ঘোষ আমরা তোমার সঙ্গে আছি’। কেন বলেছেন?’’ ডিন দাবি করেন, তিনি তেমনবলেননি।
প্যাথলজি বিভাগে প্রধান বিদ্যুৎ গোস্বামী বলেন, ‘‘সুশান্ত রায় (উত্তরবঙ্গ লবির অন্যতম কর্তা বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং স্বাস্থ্য-প্রশাসনের অন্দরে পরিচিত) আসতে পারবেন না বলে আপনি একটি কর্মসূচি বাতিল করতে বলেন। আমি প্রশ্ন করলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’’ অর্থোপেডিকস বিভাগের দুই চিকিৎসক, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক-সহ অনেক চিকিৎসক পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে সেখানে হাজির হন। ডিন বলেন, ‘‘ক্ষমা চেয়েই বলছি।’’ অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘আর ক্ষমা চাইতে হবে না, বলে দিন যা বলার।’’ এ দিন পড়ুয়াদের নানা অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গড়েন কর্তৃপক্ষ। সে কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
রাত পর্যন্ত ডিনের পদত্যাগ নিয়ে টানাপড়েন চলে। অধ্যক্ষের দফতর থেকে অভিযোগ লিখে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতরে, পুলিশে জানানো হয়। নথি তৈরি হয়। শেষে ডিন এবং সহকারী ডিন সুদীপ্ত শীল ইস্তফা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy