Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
DJ Box

DJ Box: বেশি ভাড়ায় ‘গোপনে’ ডিজে-বক্স

মন্দিরে যেতে পিক-আপ ভ্যানে ডিজে-বক্স এবং জেনারেটর চাপাতে চাইলে, আপত্তি নেই ব্যবসায়ীদের একাংশের। বরং, বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।

ঝুঁকির যাত্রা: এ ভাবেই ছোট ট্রাকে ডিজে-বক্স তুলে চলে তুমুল নাচগান। রবিবারের দুর্ঘটনার পরেও কি দেখা যাবে এই দৃশ্য? উঠছে প্রশ্ন।

ঝুঁকির যাত্রা: এ ভাবেই ছোট ট্রাকে ডিজে-বক্স তুলে চলে তুমুল নাচগান। রবিবারের দুর্ঘটনার পরেও কি দেখা যাবে এই দৃশ্য? উঠছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ০৬:১২
Share: Save:

ডিজে-বক্স মিলবে? প্রশ্ন শুনে দোকানের ভিতরের দিকে তাকালেন ডেকোরেটরের দোকানের কর্মী। ভিতরে বসা এক জন প্রথমে বললেন, “হবে না।” কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিনিই বললেন, “নিজেদের দায়িত্বে নিতে পারবেন? ভাড়া কিন্তু বেশি পড়বে।”

মঙ্গলবার কোচবিহার শহরে একই অভিজ্ঞতা হল পিক-আপ ভ্যানের ক্ষেত্রেও। গাড়িতে ডিজে বক্স, তা চালানোর জন্য জেনারেটর তুলে জলপাইগুড়ির জল্পেশ মন্দিরে যাওয়া যাবে কি না জানতে চাওয়ায়, সামান্য গাঁইগুঁই করে, এক গাড়িচালক বললেন, ‘‘বেশি ডিজে-বক্স নেবেন না। ভিতরের রাস্তা দিয়ে চেষ্টা করব। সে হিসাবে বেশি ভাড়া দেবেন।’’

জল্পেশে যাওয়ার পথে পিক-আপ ভ্যানে ডিজে বক্স বাজানোর জন্য রাখা জেনারেটর থেকে ‘শর্ট সার্কিট’ হয়ে ১০ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে রবিবার রাতে, এমনই অনুমান ছিল পুলিশের। এ দিন মেখলিগঞ্জে গিয়ে গাড়িটি পরীক্ষা করে একই ধারণা হয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। তার পরেও মন্দিরে যেতে পিক-আপ ভ্যানে ডিজে-বক্স এবং জেনারেটর চাপাতে চাইলে, আপত্তি নেই ব্যবসায়ীদের একাংশের। বরং, বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।

শ্রাবণ মাসে গাড়ি, ডিজে-বক্স, জেনারেটর, আলো ভাড়া দিয়ে বাড়তি কয়েক হাজার টাকা আয় করেন ব্যবসায়ীরা। কোচবিহার থেকে জল্পেশে যেতে একটি পিক-আপ ভ্যান তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া নেয়। শীতলখুচি এবং মাথাভাঙা থেকে ওই ভাড়া আড়াই-তিন হাজার টাকা। আলাদা ভাবে গাড়িতে ‘সাউন্ড সিস্টেম’ তোলা হয়। সে জন্য জেনারেটরও ভাড়া করা হয়। দিন হিসাবে যার ভাড়া দু’হাজার টাকা। আর ডিজে-বক্স দু’টি নিলে, দেড়-দু’হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। এখন পুলিশের কড়াকড়ি হওয়ার পরে, সে সবের জন্য গড়ে হাজার থেকে দু’হাজার টাকা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে।

জলপাইগুড়ি পুলিশ গাড়িতে ডিজে বাজিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। কোচবিহার পুলিশ জনতাকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। তার পরেও, গলিঘুঁজি দিয়ে জল্পেশে যেতে বরাত নিচ্ছেন অনেকে। কেন এ ভাবে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আইন ভাঙা হচ্ছে? ‘কোচবিহার জেলা অটো-পিকআপ ভ্যান ইউনিয়ন’-এর নেতা আজিজুল হোসেন বলেন, “অনেক পার্টি (যাঁরা ভাড়া নিচ্ছেন) আলাদা করে ডিজে-বক্স, জেনারেটর গাড়িতে তোলে। আমরা না তুলতে চাইলেও, চাপাচাপি করে।” ওই সংগঠনের এক নেতা মানছেন, ‘‘পার্টি যদি নগদে বেশি টাকা দেয়, কেউ কেউ কথা মেনে নেন।’’

‘কোচবিহার জেলা মাইক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সঞ্জিত পাল অবশ্য বলেন, “ডিজে-বক্স ভাড়ায় দেওয়া হয়, অস্বীকারের জায়গা নেই। কিন্তু পুলিশ যখন নিষেধ করে, বা যা নিয়ম করে, তা মেনে চলি।”

কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘সর্বত্র বলে দেওয়া হয়েছে, কেউ যাতে গাড়িতে জেনারেটর এবং ডিজে বক্স তুলে যাতায়াত না করে। আমরা নজর রাখছি।’’ পক্ষান্তরে, জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেছেন, ‘‘কোনও ভাবেই গাড়িতে জেনারেটর, ডিজে নিয়ে কেউ জেলায় চলাচল করতে পারবে না। আমরা নাকা-চেকিং করছি।’’

প্রশ্ন হল, ফস্কা গেরো না থাকলে, লোকে বেশি ভাড়া চাইবে কেন!

অন্য বিষয়গুলি:

DJ Box Death Sitalkuchi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy