অপেক্ষায়: শিবা রায়ের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
ভুবনেশ্বর এমসে টেলিভিশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে মৃতদেহের ছবি। কিন্তু যে ছবির সঙ্গে কোচবিহারের দিনহাটার নিগম নগরের যুবক শিবা রায়ের মিল ছিল, তা আর দেখা যাচ্ছে না। ১৪ নম্বর ওই দেহের ছবি কোথায় গেল? তার ডিএনএ-পরীক্ষা কি হয়েছে? সে সবের খোঁজ নিতে গিয়ে শিবার জেঠু ভরত বর্মণ জানলেন, দেহটি বিহারের এক পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছে। তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে ওই ছবির। তা হলে শিবা কোথায়? সদুত্তর মিলছে না।
শিবার বাবা মঙ্গলবার ভুবনেশ্বর গিয়ে পৌঁছন। সেখানে তাঁর ডিএনএ-পরীক্ষা হয়। ভরত বলেন, ‘‘আমরা যে দেহটি দেখে শনাক্ত করেছিলাম। শুধু শিবার বাবার অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি চলেও এসেছেন। ডিএনএ-পরীক্ষা হয়েছে তাঁর। তা হলে ওই দেহের কি কোনও পরীক্ষা হয়নি! এখন আমরা কী করব! এখানে তো এক দেহের একাধিক দাবিদার চলে আসছেন।’’ স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, হয় তাঁরা দিন দশেক থাকুন। অথবা, চলে যেতেও পারেন। ডিএনএ মিলে গেলে, দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হবে বাড়িতে।
এ দিকে, শিবার বাড়িতে কার্যত নাওয়া-খাওয়া বন্ধ পরিবারের সদস্যদের। কখনও প্রতিবেশীরা এসে শিবার মা লক্ষ্মী রায়, স্ত্রী জয়া রায়কে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে ফিরে আসবেই।’’
দিনহাটারই মহেশ্বর গ্রামের জিশান আলমের কোনও খোঁজ মেলেনি। ট্রেন দুর্ঘটনার পরে, জিশানের তিন আত্মীয় সাইফুল রহমান, সাজ্জাদ হোসেন ও ফিরোজ রহমান বালেশ্বর যান। ফিরোজ মঙ্গলবার দিনহাটায় ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এক টানা কয়েক দিন ভুবনেশ্বরে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে জিশানকে উদ্ধারের জন্য খোঁজ করি। কিন্তু খোঁজ পাইনি।’’ জিশানের আরেক দাদা সাইফুল রহমান বলেন, ‘‘প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেও দেহ উদ্ধার হয়নি। তবে নস্যি পার্ক এলাকার একটি দেহের ছবির সঙ্গে জিশানের মিল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে মৃতদেহ দেখতে পাইনি। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে ছবির সঙ্গে মিল দেখে সরকারি নম্বর অনুযায়ী, মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে মৃতদেহ পরিবারের হাতে দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন যে মৃতদেহগুলি রয়েছে, সেগুলি ডিএনএ-পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, যাঁদের সঙ্গে ডিএনএ মিলবে, সে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ জিশানের খোঁজ না পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে গোটা গ্রামের বাসিন্দারা। মাঝে মাঝেই জিশানদের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগে রয়েছি। ওই দু’জনকে যাতে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy