Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mother's Dead Body

মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটা ছেলেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন, জলপাইগুড়িতে ধৃত সেই অঙ্কুর

পুলিশ সূত্রে খবর, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে অঙ্কুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই সংগঠনের দাবি, গোটা ঘটনা সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলে। নিজস্ব চিত্র।

মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫২
Share: Save:

মায়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ছেলের হাসপাতাল চত্বর ছাড়ার দৃশ্য দিন কয়েক আগেই গোটা রাজ্যে আলোড়ন ফেলেছিল। জলপাইগুড়ির ক্রান্তির সেই পরিবারকে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে সাহায্য করেছিল, সেই সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাসকেই বুধবার গ্রেফতার করল কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে অঙ্কুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই সংগঠনের দাবি, গোটা ঘটনা সাজানো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ‘সরকারকে বদনাম’ করতেই মৃতের পরিবারকে ব্যবহার করে গোটা ঘটনা সাজিয়েছিলেন অঙ্কুর। তাঁকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘কোতোয়ালি থানায় একটি নির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে এক জনকে গ্রেফতার করেছি আমরা। একটি শ্রেণির ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন না উনি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বুধবারই অঙ্কুরকে জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ দিকে, অঙ্কুরের গ্রেফতারির খবর পেয়েই জলপাইগুড়িতে ছুটে আসেন ক্রান্তির সেই দেওয়ান পরিবারের গৃহকর্তা জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। তাঁর দাবি, অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে নিজেরাই দেহ কাঁধে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জয়কৃষ্ণের কথায়, ‘‘কাঁধে দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কেউ প্ররোচনা দেয়নি।’’ এই ঘটনায় প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতেও পিছপা হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয় ৭২ বছরের লক্ষ্মীরানি দেওয়ানের। পর দিন সকালে ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ানকে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে দেখা যায়। রামপ্রসাদ দাবি করেন, হাসপাতাল থেকে তাঁদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব যেতে হাসপাতাল চত্বরের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা তিন হাজার টাকা চেয়ে বসেন। এত টাকা ছিল না রামপ্রসাদদের কাছে। জয়কৃষ্ণও বলেন, ‘‘গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্মীদেরও বলা হয়েছিল। তাঁরাও সাহায্য করেননি।’’ যদিও কিছু দূর যাওয়ার পরেই অঙ্কুরদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্স রামপ্রসাদদের ক্রান্তিতে পৌঁছে দেয়।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বেহিসাবি দাম হাঁকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। যদিও অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠন দাবি করে, তারা দু’হাজার টাকায় যেতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু মৃতার পরিবারই দেহ গাড়িতে তোলেনি। রামপ্রসাদদের বাড়ি পৌঁছতে সাহায্য করা সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন সংগঠনের সম্পাদক দিলীপ দাস।

পাল্টা অঙ্কুরের দাবি ছিল, ‘‘হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠনের সদস্যেরা বাইরের অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি হাসপাতালে ঢুকতে দেন না। ঘটনার খবর পেয়েই মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।’’

ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ দাবি করেছিলেন, চোখে দেখেও রামপ্রসাদদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কোনও হাসপাতাল কর্মী। উল্টে কর্তব্যরতদের একাংশ ছবি তুলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার হাসপাতালের সুপার কল্যাণ খান বলেন, ‘‘একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। তারা রিপোর্ট পেশ করেছে। তাদের সুপারিশ এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তিন নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওঁরা সতর্ক থাকলে ওই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা এড়ানো যেত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mother's Dead Body Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy