Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Darjeeling hotels and home stays

এই ঠান্ডায় কোথায় যাবেন! তুষারপাত দেখতে আসা পর্যটকদের নিজেদের ঘর খুলে দিচ্ছেন দার্জিলিংবাসী

পাহাড়ে তিলধারণের জায়গা নেই। হোটেল এবং হোমস্টেগুলি ভরে গিয়েছে। এই অবস্থায় পর্যটকদের মাথা গোজার ঠাঁই দিতে এগিয়ে এসেছেন সাধারণ পাহাড়বাসী। তাঁরা ঘরে থাকতে দিচ্ছেন বিনামূল্যে।

Image of darjeeling mall road full of tourists

পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করছে দার্জিলিংয়ের ম্যাল রোড। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৩১
Share: Save:

বসুধৈব কুটুম্বকম্! বসুধা প্রকৃতপক্ষে একটি পরিবার। সংস্কৃত এই বাগধারা বাস্তবে পরিণত করছেন ওঁরা। ওঁরা, অর্থাৎ পাহাড়ের সাধারণ মানুষ।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের কথায় ‘আনকাউন্টেবল’ ভিড়! শুধুমাত্র দার্জিলিং নয়, কালিম্পং, সিকিম-সহ উত্তরের হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় উপচে পড়া ভিড় পর্যটকদের। মূলত ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। হোটেল বুকিং অনেক দিন আগেই বন্ধ। ভরসা ছিল হোমস্টে। তা-ও একে বারে টইটম্বুর। তবে পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হয়নি। বহু পাহাড়ি গ্রামে সাধারণ মানুষ তাঁদের জন্য নিজেদের ঘর খুলে দিয়েছেন। তা-ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যাতে প্রবল ঠান্ডায় খালি আকাশের তলায় রাত কাটাতে না হয় তুষারপাত দেখতে দার্জিলিংয়ে আসা পর্যটকদের।

দুপুর হতেই বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। তৈরি হচ্ছে তুষারপাতের সম্ভাবনা৷ গোটা পাহাড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই, তা আগেই ঘোষণা হয়েছিল। তবে এত পর্যটক যে চলে আসবেন, তা ছিল কল্পনারও অতীত। এখন প্রশ্ন হল, বাড়তি পর্যটকেরা থাকবেন কোথায়? সেই প্রশ্নের সমাধান করে দিলেন পাহাড়বাসীই। হঠাৎই ভিড় বেড়ে যাওয়ায় হোটেল থেকে হোমস্টে পর্যটকে ঠাসা৷ আবহাওয়ার অবস্থাও ভাল নয়। সমতলের বাসিন্দাদের পক্ষে রাতে বেশি ক্ষণ খোলা আকাশের নীচে থাকাও বিপজ্জনক। এই অবস্থায় রাতে অন্তত মাথা গোঁজার বন্দোবস্ত করে দিলেন দার্জিলিংয়ের নীলিমা তামাং, কার্শিয়াঙের চিমনি এলাকার অলোক প্রধান, সিটং, লাটপামচার, কালিম্পংয়ের ইয়েলবং-সহ একাধিক জায়গার সাধারণ মানুষ। খুলে দিলেন তাঁদের ঘরের দরজা। সেখানেই রাতটা কাটালেন বহু পর্যটক। তবে গোটাটাই বিনামূল্যে।

রাজ্য ইকো ট্যুরিজম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘বড়দিন বা বছরের শুরুর দিনে পাহাড় একেবারে পর্যটকে ঠাসা। হোটেল বা হোমস্টেগুলিতে বুকিং বন্ধ। তা-ও পাহাড়ে পর্যটক গিজগিজ করছে। এত পর্যটকের থাকার ব্যবস্থার সমস্যা দেখা দিলেও দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের গ্রামের মানুষই এগিয়ে এসেছেন সমস্যা সমাধানে। আমাদের কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে যে, গ্রামবাসীরা বিনামূল্যে তাঁদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন পর্যটকদের। সেটা হয়তো বেশি দিনের জন্য নয়, এক রাত বা দু’রাতের জন্য৷ তার মধ্যেই নিজেদের একটা ব্যবস্থা করে ফেলছেন পর্যটকেরা। আমার মনে হয়, এই আতিথেয়তাই মানুষকে আরও বেশি করে পাহাড়মুখী করছে।’’

কালিম্পংয়ের সিটঙের বাসিন্দা অলোক প্রধান বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে অনেক হোমস্টে রয়েছে। কিন্তু সব ভরা। চোখের সামনে দেখছি পর্যটকরা অসহায়ের মতো ঘুরছেন। আমি দু’দিন দু’টি দলকে ঘরে থাকতে দিয়েছি। তারা খাওয়াটা হোমস্টেতে সেরেছেন। এখানে শুধু রাতে ঘুমিয়েছেন। এই আবহাওয়ায় কোথায়ই বা যাবেন তাঁরা!’’

একই কথা হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যালেরও। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও আমরা ভিড় দেখেছি। কিন্তু কোভিডের পর এত ভিড় এই প্রথম। জায়গা নেই দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিমে। হোমস্টে থেকে হোটেল— সব জায়গা ভরে গিয়েছে। বিগত বছরগুলিতে আমরা হিসেব করেছি, কিন্তু এ বছর আর হিসেব করার মতো অবস্থা নেই। এই সময় মুশকিল আসান হয়ে এগিয়ে এসেছেন পাহাড়ের সাধারণ মানুষ। এই মানবিকতাই তো পাহাড়ের পরিচয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Snowfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy