আমরা খেলব কোথায়?
পড়ুয়া দের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে আপাতত শহরের মাঝে খেলার মাঠে ভবন তৈরির পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হল জলপাইগুড়িতে।
শহরের মাঝখানে একটুকরো মাঠ। সেখানে ছুটির দিন সকাল থেকে ব্যাটবল হাতে নেমে পড়ে কচিকাঁচারা। কাজের দিনে বিকেল থেকে কচিকাঁচাদের কলতানে মুখর হয় জলপাইগুড়ির দিনবাজার এবং সমাজপাড়ার সংযোগস্থলে থাকা ছোট গোশালার মাঠ। খুদেদের সঙ্গে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারাও খেলে এই মাঠে। আয়োজন হয় প্রতিযোগিতারও। দু’ একদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল, এই ফাঁকা মাঠে গোশালা কর্তৃপক্ষ ভবন তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। এ দিন কচিকাঁচা থেকে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা মাঠে এসে প্রশ্ন তোলে, আমরা তবে খেলব কোথায়?
প্রতিবাদী পড়ুয়াদের অনেকের বাবা বা অভিভাবক গোশালা কমিটিতে তথা ভবন বানাতে উদ্যোগী কমিটিতে রয়েছে। তাঁদেরকে পড়ুয়ারা প্রশ্ন করে, “এর বদলে অন্য মাঠ দিতে পারবে?” পড়ুয়াদের প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে না পারায় এবং তাদের খেলার মাঠের বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে তা ঠিক করতে না পারায় আপাতত ‘খেলার মাঠে’ ভবন তৈরির পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে বলে দাবি কমিটির।
জলপাইগুড়িতে গোশালা রয়েছে শহর লাগোয়া জাতীয় সড়কের পাশে। এলাকাটিও গোশালা মোড় নামে পরিচিত। সেই গোশালার জমি রয়েছে শহরের মাঝে দিনবাজার এলাকায়। মারোয়ারি বালিকা বিদ্যালয়ের পিছনে। ওই মাঠ ঘেরা দেওয়াও রয়েছে। ওই মাঠে এলাকার কচিকাঁচাদের নিত্য জমজমাট খেলার আসর। আশেপাশে কোনও খেলার মাঠ নেই। সে কারণে এই মাঠই ভরসা ক্ষুদেদের। গোশালা কমিটির পরিকল্পনা জেনে এ দিন সকালে মাঠে জড়ো হতে থাকে পড়ুয়ারা। উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা টোটোতে মাইক বেঁধে নিয়ে এসেও প্রতিবাদ শুরু করে। বড়দের সঙ্গে বাদানুবাদও হয় ছোটদের। রাস্তায় চলে আসে বচসা। শেষে পড়ুয়াদের খেলার মাঠের নাছোড় আবদারে পিছিয়ে যেতে হয় বড়দেরই। জলপাইগুড়ি মারোয়াড়ি যুব মঞ্চের জলপাইগুড়ি গ্রেটার শাখার বিদায়ী সম্পাদক শিবম আগরওয়াল বলেন, “গোশালা কমিটি আমাদের একটি অফিসও তৈরি করে দেবে বলেছে। বাচ্চাদের বলা হয়েছে। আলোচনা করেই পদক্ষেপ হবে।“ গোশালার কমিটির সভাপতি প্রদীপ সিতানি জানিয়েছেন, এলাকার পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেই মাঠ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ দিন পড়ুয়ারা বলেছে, “আমাদের খেলার জায়গা দিতে হবে। বাড়ির ছাদে, রাস্তায় তো আর খেলা যায় না। আমরা এই মাঠেই খেলব।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)