টানা লোকসানের জেরে দেড় দশক আগে উত্তর দিনাজপুরের একমাত্র সরকারি শিল্প রায়গঞ্জের স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে যায়। বছর তিনেক আগে রাজ্য সরকার স্পিনিং মিলের জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার কথা ঘোষণা করে। তৈরি হয় পরিকাঠামো। কিন্তু সরকার নির্ধারিত জমির দাম নিয়ে জটে কবে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক চালু হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। জেলা শিল্পকেন্দ্রে জেনারেল ম্যানেজার অভিষেক বসাকের বক্তব্য, ‘‘ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমির দাম কমানোর জন্য প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত ভাবে দাবি জানিয়েছেন। আশা করছি, শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
ইতিমধ্যেই ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৭৭টি ‘প্লট’ করে জমি ভাগ করার কাজ শেষ করেছে রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম। জেলায় উৎপাদিত কৃষিভিত্তিক শিল্প ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, বিভিন্ন ঘরোয়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি-সহ বিভিন্ন ছোট শিল্প স্থাপনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাঠা প্রতি জমির সরকারি দাম নির্ধারণ করেছে পাঁচ লক্ষ টাকা। কিন্তু, জেলার দু'টি ব্যবসায়ী সংগঠন জমির ওই দাম নিয়ে প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের কাছে আপত্তি জানায়। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোমের দাবি, জমির দাম বেশি থাকায় ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোগীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমি কিনতে চাইছেন না। অত দামে জমি কেনার পরে সেখানে শিল্প তৈরি করতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। জয়ন্ত বলেন, ‘‘সংগঠনের পক্ষ থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাঠা প্রতি জমির দাম আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।’’ রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জেলার শিল্পদ্যোগীদের বিনা পয়সায় জমি দেওয়ার দাবি তুলেছে। সভাপতি শান্তনু দাস বলেন, ‘‘জেলায় শিল্প নেই, কর্মসংস্থান নেই। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জেলার শিল্প ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে প্রশাসনের কাছে ব্যবসায়ী, শিল্পদ্যোগীদের বিনা পয়সায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমি দেওয়ার দাবি তুলেছি।’’ সমস্যা মেটাতে কিছু দিন আগে ওই দুই ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শন করেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এবং মহকুমাশাসক (রায়গঞ্জ) কিংশুক মাইতি। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোগীদের সুবিধার্থে ও জেলায় সরকারি শিল্প তৈরির স্বার্থে রাজ্য সরকারের কাছে ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাঠা প্রতি জমির দাম আড়াই লক্ষ টাকা করার অনুরোধ জানিয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)