নষ্ট করা হচ্ছে পোস্ত। কোচবিহার জেলায়। নিজস্ব চিত্র
জেলায় গাঁজা চাষ নিয়ে এক সময় হিমশিম অবস্থা ছিল পুলিশ ও আবগারি দফতরের। বছর দশেক আগে তার পাশাপাশি, অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষ শুরু হয় কোচবিহারে। মূলত পুন্ডিবাড়ি, ঘোকসাডাঙায় সে অবৈধ চাষের ‘রমরমা’ বলে শোনা যায়। চাষের জন্য বেছে নেওয়া হয় নদীর চর এলাকা। তোর্সা, মানসাই নদীর চরে স্থানীয় চাষিদের দিয়ে চাষ শুরু করায় মাদক কারবারিরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নদীর চরের ফাঁকা জমিকেই বেছে নেওয়া হয়, যাতে সে চাষ পুলিশ, আবগারি দফতরের নজরে এলেও জমির মালিকানার সূত্রে কাউকে চিহ্নিত করা না যায়। প্রথম দিকে, হাতে গোনা পনেরো থেকে কুড়ি বিঘা তেমন জমিতে চাষ করা হত। ধীরে ধীরে চাষের আয়তন বাড়তে শুরু করে। এখন দুশো বিঘারও বেশি জমিতে পোস্ত চাষ হয় হলে আবগারি দফতর সূত্রের দাবি। কী করে সে চাষ চলছে তা নিয়ে অব্যাহত রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
পুলিশ ও আবগারি সূত্রে খবর, শুধু পুন্ডিবাড়িতেই একশ বিঘার মতো জমিতে অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষ হয়। সম্প্রতি কালপানি, বাঁশদহ, নতিবাড়ির মতো তোর্সা পাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় অভিযান চালায় আবগারি দফতর ও পুলিশ। তিন দিনে সেখানে প্রায় ১০০ বিঘা জমির পোস্ত খেত নষ্ট করা হয়েছে। আবগারি দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পোস্ত চাষের এলাকা খুব বেশি নয়। এ বার একশো বিঘা অবৈধ চাষ নষ্ট করা হয়েছে। আর খুব বেশি এলাকায় ওই চাষ নেই।’’ জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের দাবি, ‘‘অবৈধ পোস্ত চাষ হচ্ছে খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাই।’’
আবগারি দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বিঘা জমিতে কম করে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলো পোস্ত উৎপাদন হয়। পোস্ত গাছ থেকে যে আঠা মেলে, তার দাম বাজারে কেজি প্ৰতি প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা। এক বিঘা জমির পোস্ত থেকে দুই-তিন কেজি আঠা পাওয়া যায়। পোস্তর খোলা বিক্রি হয় চড়া দামে। এক বিঘা জমিতে ১৪০ কেজি মতো পোস্তর খোলা উৎপাদন হয়, কেজি প্ৰতি যা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। বৈধ ভাবে উৎপাদিত পোস্তর দাম কেজি প্রতি ১,৫০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
মাদকের কারবারে পোস্তর আঠা থেকে মূলত আফিম, ব্রাউন সুগার, হেরোইনের মতো নেশার জিনিস তৈরি হয়। সে আঠা মাদক কারবারিরা কেনে নগদে। ওই চাষে জড়িত একাধিক চাষির কথায়, ‘‘চাষের জন্য অগ্রিম মেলে। এক বিঘা জমি থেকে দশ লক্ষের বেশি আয় করা সম্ভব। তা ছাড়া, চরে বা খাসজমিতে চাষ করলে, জমির মালিকানার সূত্রে সরাসরি ধরা পড়ার আশঙ্কা কম।’’ কিন্তু ওই চাষ থেকে তৈরি মাদকের প্রভাবে বহু মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। চাষ করার আগে সে কথা কি মাথায় থাকে? অধিকাংশ চাষি নিরুত্তর। এক-দু’জন দাবি করেন, মাদকের যা দাম, সে তুলনায় টাকা তাঁরা পান না। তা ছাড়া, মাদক কারবারিরা ভয় দেখিয়ে বা চাপ দিয়ে তাঁদের চাষে বাধ্য করে। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কাঁচা টাকার লোভটাই এই বেআইনি চাষের সব চেয়ে বড় কারণ। সে কারণে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। ধরা পড়লেই বেশ কয়েক বছরের জন্য জেল নিশ্চিত।”
অবৈধ পোস্ত চাষে কাদের মদত রয়েছে, সে প্রশ্নে চলে চাপান-উতোর। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের দাবি, “বাম আমলে গাঁজা, পোস্তের রমরমা এক দমই ছি লনা। তখন আইনের শাসন ছিল। তৃণমূল জমানায় সে সবের বালাই নেই। সর্ষের মধ্যে কিছু ভূত রয়েছে শোনা যায়।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের পাল্টা জবাব, “পুলিশ, প্রশাসন কঠোর বলেই এখন জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাঁজা, পোস্ত চাষের খেত ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে। বাম জমানায় এ সবের বালাই ছিল না।” দু’পক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলে কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “বাম এবং তৃণমূল— দুই জমানাতেই গাঁজা, অবৈধ পোস্ত চাষের কারবারিরা সক্রিয় ছিল, আছে। সিপিএম জমানায় শুরু হয়েছিল, তৃণমূল জমানাতেও সে ছবি বদলায়নি। পুলিশ, আবগারি দফতর যথাযথ ভাবে কাজ করলে এতটা বাড়বাড়ন্ত হত না।” চাপান-উতোর, তরজা, দোষারোপ চলতে থাকে। বন্ধ হয় না অবৈধ চাষ! (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy