সর্ষের মধ্যেই ভুয়ো মোবাইল সিমের ‘ভূত’ লুকিয়ে আছে কী!
প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনই অনুমান পুলিশের। সে কারণে সিম জালিয়াতিতে ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজছে পুলিশ। গ্রাহকদের থেকে নথি হাতিয়ে বা ভুয়ো নথি দিয়ে মোবাইলের সিমের সংযোগ নেওয়ার কাজ করে সিম বিক্রেতা দোকানের কর্মীদের একাংশ, মালিক বা ‘এজেন্ট’রা। সেই ভুয়ো বা জাল সিম কী ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে অপরাধী চক্রের হাতে। এখনও পর্যন্ত জেলায় জেলায় গ্রেফতার হওয়া সিম বিক্রেতাদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, তাঁরা ভুয়ো সিম তুলে দিয়েছে কিছু দালাল বা এজেন্টের হাতে।
সেই ভুয়ো সিম অপরাধ চক্রের হাতে যাচ্ছে কী ভাবে? পুলিশের সন্দেহ, এই ‘মিসিং লিঙ্কে’ রয়েছে সিমের পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মী বা প্রতিনিধিদের একাংশ। এ বার তাঁদেরও জেরা করতে চাইছে পুলিশ। জলপাইগুড়িতে এমন কয়েক জনকে জেরা করা হবে শীঘ্রই।
উত্তরবঙ্গ জুড়েই ভুয়ো সিমের খোঁজ মিলেছে। কোথাও জেলা পুলিশের নিজস্ব সূত্রে ভুয়ো সিমের হদিশ মিলেছে। কোথাও বা রাজ্য পুলিশের এসটিএফ থেকে জেলায় জেলায় ভুয়ো সিমের তথ্য পাঠানো হয়েছে। জেলা থেকে ভুয়ো সিমের সংযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধ চক্রের কাছে তা পৌঁছে যায়। সেই অপরাধ চক্রের শাখা হয়তো দিল্লিতে বা হরিয়ানায়। সেখান থেকে ফোন করে নানা ভাবে টাকা আদায় এবং প্রতারণা চলছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি জেলার সিম যেমন দিল্লিতে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, কী ভাবে দোকানের কর্মীর থেকে সিম অপরাধ চক্রের হাতে পৌঁছেছে, অর্থাৎ কে বা কাদের মাধ্যমে, সেটা চিহ্নিত হলেই চক্রের অনেককে ধরা সম্ভব হবে। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে বলেন, “কোন মাধ্যমে ভুয়ো সিম অপরাধীদের হাতে পৌঁছেছে, সেটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মী বা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছি।”
মোবাইলের নতুন সিম সংযোগ নিতে গেলে ‘বায়োমেট্রিক’ তথ্য দিতে হয়, অর্থাৎ আঙুলের ছাপ। এক বার আঙুলের ছাপ দিলে বিক্রেতা অনুরোধ করেন ছাপ ঠিকঠাক হয়নি, দ্বিতীয় বার ছাপ দিতে, কোনও সময়ে দ্বিতীয় বারও হয়নি বলে জানানো হয় তৃতীয় এমনকী চতুর্থ বারও ছাপ দিতে হয়। এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, হতেই পারে যত বার গ্রাহক আঙুলের ছাপ দিলেন, তত বার তাঁর নামে একটি করে সিমের সংযোগ করে নেওয়া হল। কিন্তু গ্রাহকের হাতে দেওয়া হল একটিই সিম। বাকি সিমগুলি চোরাপথে চলে যায় অপরাধ চক্রের হাতে। এমনই ভুয়ো সিম দিয়ে রাজ্য জুড়ে স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যে চক্রের পান্ডারা গ্রেফতার হয়েছিল উত্তর দিনাজপুর থেকে। এ বার ভুয়ো সিম দিয়ে ভয় দেখানো থেকে প্রলোভন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর মিলে এখনও পর্যন্ত কয়েকশো ভুয়ো সিমের হদিশ পেয়েছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)