‘বুলডোজ়ার নীতি’ নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ফের অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে চলল বন দফতরের বুলডোজ়ার। শুক্রবার সকালে আলিপুরদুয়ারে বন দফতরের জমির উপরে তৈরি একটি গাড়ির শোরুম ভেঙে ফেলা হল। পাশাপাশি, সিল করা হয় সার্ভিস সেন্টার বা কারখানাটিও।
বন দফতর সূত্রে খবর, কালচিনি ব্লকের গরমবস্তি এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বন দফতরের জমিতে তৈরি হয়েছিল এই অবৈধ নির্মাণটি। তাদের দাবি, এ নিয়ে শোরুম মালিককে একাধিক বার নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিজে থেকে নির্মণটি ভেঙে ফেলতেও বলা হয়েছিল। তিনি তা না মানায় শুক্রবার জাতীয় সড়কের ধারে তৈরি সেই অবৈধ নির্মাণ গুঁড়িয়ে দেয় বন দফতর। এ বিষয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা হরি কৃষ্ণণ বলেন, ‘‘এই অবৈধ নির্মাণটি যেখানে তৈরি হয়েছিল, তা বন্য জন্তুদের করিডরও। ফলে, এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবই। আগামী দিনে আমাদের সমীক্ষায় এ রকম অবৈধ কোনও নির্মাণ ধরা পড়লে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে অপরাধী বা অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজ়ারে গুড়িয়ে দেওয়ার নীতির কড়া নিন্দা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত সাফ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট নিয়ম-বিধি মেনে তবেই তা করা যাবে। এ রাজ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণিতে অবৈধ হোটেল ভাঙা নিয়ে প্রশাসনের নির্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পরেও এ দিন নির্মাণ ভাঙতে বন দফতরের বুলডোজ়ার চালানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা হরি কৃৃষ্ণণ বলেন, ‘‘এই শোরুম বন্য জন্তুদের করিডরের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। সব মহলের অনুমতি নিয়েই শোরুমটি ভাঙা হয়।’’
এক বন আধিকারিকের আবার জানিয়েছেন, শোরুমটি বন দফতরের জমিতে ছিল। আর কারখানাটি বন দফতরের জমিতে হলেও এটি ছিল ‘এসটি ল্যান্ড’। অর্থাৎ, তফসিলি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরাই সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। এবং এই জমিটির পাট্টা ছিল। ওই শোরুমেরমালিক স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে অংশীদারিত্বে ওই কারখানা তৈরি করেছিলেন। যা আইনত অবৈধ বলে দাবি। তবে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় এ দিন কারখানাটি ভাঙার বদলে সিল করা হয়েছে। ওই শোরুম ও কারখানার মালিক কালচিনি ব্লকের বাসিন্দা নন। এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
শুক্রবার সকালে গাড়ির শোরুমটি ভাঙতে চারটি বুলডোজ়ার চালান বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকেরা। মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। গত অগস্টেও কালচিনি ব্লকের দক্ষিণ মেন্দাবাড়ির বানিয়া নদী সংলগ্ন এলাকায় চালু হওয়ার আগেই একটি ‘অবৈধ’ রিসর্ট গুঁড়িয়ে দেয় জলদাপাড়া বন বিভাগ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)