ভাঙনে ৮ বিঘা জমি তলিয়ে গিয়েছে। কোশী নদীর তীরে একাকী বসে হতাশ অজয় মাহাতো। ছবি: স্বরূপ সাহা
কোশী ছিল মূলত গঙ্গার একটি ‘চ্যানেল’। গঙ্গায় জল বাড়লে ওই ‘চ্যানেল’ দিয়ে জল ঢুকে গিয়ে পড়ত ফুলহার নদীতে। আবার ফুলহারের জল বাড়লে একই ভাবে ওই ‘চ্যানেল’ দিয়ে জল এসে গঙ্গায় মিশত। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গিয়েছে। গঙ্গার জল তীব্র গতিতে ঢুকে পাড় ভাঙতে ভাঙতে সেই কোশী চ্যানেলকে যে নদীর আকার দিয়ে নেবে তা ভাবতেও পারেনি মানিকচকের ভুতনির বাসিন্দারা। বিঘার পর বিঘা আবাদি জমি এখন গিলছে সেই কোশী। চাষের জমি হারিয়ে দিশেহারা ভুতনির অজয় মাহাতো, সঞ্জয় চৌধুরীরা। ভাঙনে কোশী আবার ভুতনি সার্কিট বাঁধের দিকেও ধেয়ে আসছে। তাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। সেচ দফতর বালির বস্তা ফেলে কোশীর অস্থায়ী ভাবে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করছে।
ভুতনির পশ্চিম রতনপুরের বাসিন্দা অজয় মাহাতো। গঙ্গায় উৎপত্তি হওয়া কোশী চ্যানেল তাঁর জমির পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ফুলহার নদীর দিকে। অজয়ের দাবি, কোশীর পাড়ে তাঁর প্রায় ১৫ বিঘা জমি ছিল। সেই জমিতে সাধারণত পাট, পটল, ভুট্টা চাষ করেন তিনি। ফসল ফলিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই বছরভর সংসার চলে তাঁর। কিন্তু এ বার গঙ্গার জল কোশী দিয়ে ঢুকে এমন ভাঙন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে ইতিমধ্যে অজয়ের প্রায় ৮ বিঘা আবাদি জমি ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। যে ভাবে গঙ্গার জল ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং তার একটা অংশ কোশী দিয়ে তীব্র গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে তাতে তাঁর পুরো জমিই ভাঙনে তলিয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে আতঙ্কিত অজয়।
তিনি বলেন, ‘‘কোশীতে সারা বছর জল থাকে না। শুধু বর্ষাকালে কখনও গঙ্গার জল বা কখনও ফুলহারে জল কোশীকে ভরিয়ে তোলে। এ বারই প্রথম গঙ্গার জলের তোড়ে কোশীতে এ রকম ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বাকি জমিটুকুও চলে গেলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। চাষবাস ছাড়া বিকল্প আয় নেই।’’
একই গ্রামের সঞ্জয় চৌধুরীর মাত্র বিঘা পাঁচেক জমি রয়েছে কোশীর পাড়ে। এ বারের ভাঙনে দু’বিঘা ইতিমধ্যে কোশী গিলে নিয়েছে। জমি হারিয়ে শোকাতুর হয়ে পড়েছেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘জমিতে চাষাবাদ করেই সংসার চলে। এ বারই প্রথম ভাঙনে দু'বিঘা জমি কোশী গিলে নিল। ভাঙন যে ভাবে চলছে তাতে বাকি জমি থাকবে কিনা সেটাই চিন্তার।’’
অজয়, সঞ্জয়দের মতো কোশীর পাড়ের বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন যে সেচ দফতর যেন দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়। সেচ দফতরের অধীক্ষক বাস্তুকার (উত্তর মণ্ডল ১) উত্তমকুমার পাল বলেন, ‘‘সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকও করা হয়েছে। কোশীর উৎসমুখ বড় কালুটোনটোলায় ২০০ মিটার ও পশ্চিম রতনপুর এলাকায় আরও ২০০ মিটার জুড়ে বালির বস্তা ফেলে আপৎকালীন কাজ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy