দার্জিলিঙের ঐতিহ্যবাহী ক্যাপিট্যাল হলে চলছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সভা’। নিজস্ব চিত্র
নতুন বছরের শুরুতে ভরা পর্যটন মরসুমে দার্জিলিং ক্যাপিট্যাল হলের সামনে চলছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সভা’। রবিবার সেই সভার মাইকের আওয়াজে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বহরমপুরের বাসিন্দা চন্দন সেন এবং ঊর্মি সেন। আবার পাহাড়ে কোনও সমস্যা হল কি না তা জানতেও চান এর-ওর কাছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়ে দেন, পুরসভার বোর্ডের হাতবদল ঘিরেও টানাপড়েন অব্যাহত। তবে ও সব নিয়ে না ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়াতে ওই দম্পতিকে পরামর্শ দিলেন কেউ কেউ। তাঁদের আশ্বাস, দার্জিলিং আর আগের মতো নেই। ভয়, আতঙ্ক, ফতোয়া— এ সব গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাহাড়ে। স্বস্তি পেলেন পর্যটক দম্পতি।
স্থানীয় চকবাজার লাগোয়া স্টেশনারি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পেমা ভুটিয়া বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে পাহাড় অনেকটাই বদলেছে। বন্ধ, রাস্তা রোকো, গাড়ি বন্ধ এ সব নেই। বহুদলীয় ব্যবস্থা এসেছে। তাই রাজনৈতিক টানাটানির মধ্যেও ছেদ পড়েনি পর্যটনে৷’’ পাশ থেকে কলেজ পড়ুয়া নির্জ্জল লামা বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আন্দোলন মানেই ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশ নেই। পাহাড় জুড়ে ঘুরছেন পর্যটকেরা৷ রাজনীতি থাকুক, কিন্তু তার প্রভাব যাতে এলাকার পর্যটনে না পড়ে, সেটাইচাইছেন সবাই।’’
সরকারি তথ্য বলছে, এ বারের বড়দিন, নতুন বছরের পর্যটন মরসুমে দার্জিলিঙের হোটেল, লজ ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। কালিম্পঙের সংখ্যা্টা ৭৫ শতাংশের মতো। পাহাড়ি গ্রামে ছড়িয়ে থাকা হোম স্টেগুলিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সিটং, সুখিয়াপোখরি, তাকদা, লামাহাটা, দাওয়াইপানি, তিনচুলে, সিলেরিগাঁও, কাফের, পোম্বু, চারকোলের মতো এলাকায় হোম স্টেগুলিতে থাকার জায়গা ছিল না। করোনার পর গত বছর প্রথম পুজোর মরসুম থেকে পর্যটনের হাল ফেরা শুরু করে। এ বছর ভিড় রয়েছে চোখে পড়ার মতো।
যদিও পাহাড়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন পুরোপুরি অব্যাহত। জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং দু’দিন আগেই চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সরব হন। রাজ্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন গুরুং। রবিবার হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্ন তুলেছেন। অজয় বলেছেন, ‘‘আমরা চাই এক বছরের মধ্যে এ সমস্যা মিটুক। যাঁরা মেটানোর কথা বলছিলেন, তাঁরা কাজ করে দেখান।’’
অজয়, বিমলের পাশে রয়েছেন বিনয় তামাংও। সেখানে পুরোপুরি উল্টো মেরুতে বসে পঞ্চায়েত ভোট নতুন বছরে পাহাড়ে হলে উন্নয়নের জোয়ার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। পাহাডের বাসিন্দারা বলছে, কয়েক বছর আগে এই টানাপড়েন, অভিযোগের পরিবেশ হলে পাহাড়ের চেহারা মুহূর্তেই বদলে যেত। থমথমে পরিবেশ তৈরি হত। পর্যটন তো দূরের কথা, স্থানীয়দের ব্যবসা, বাণিজ্যে টান পড়ত। এই বদল জরুরি ছিল বলে তাঁদের অভিমত।
জিটিএ-র চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত বলেন, ‘‘পর্যটন পাহাড়ের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর বিকাশ আরও করতে হবে। সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা পাহাড়ে বজায় রাখতেই হবে। আমরা সেদিকে নজর রেখে পাহাড়বাসীকে সতর্ক থাকতে বলছি।’’ বছরের শুরুর এই পরিস্থিতিতে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। দামের কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকলেও হোটেল, পরিবহণ, গাইড সবার আয়ও বেড়েছে। পর্যটন সংগঠন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সচিব সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘রাজনীতি থাকুক আলাদা। পর্যটন, উন্নয়ন শান্তি থাকুক বজায়। পাহাড়েআমরা এটাই চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy