পর্যটকদের সামনে রাজপরিবরারে ইতিহাস, রাজ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিস তুলে ধরার জন্য কোচবিহার রাজবাড়ির একাংশে গড়ে তোলা হয়েছিল মিউজ়িয়াম। অভিযোগ, যত্নের অভাবে সেই মিউজ়িয়াম ক্রমে কৌলীন্য হারাচ্ছে। সংগ্রহালার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় ইতিহাসপ্রেমী, পর্যটকদের একাংশ।
অভিযোগ, মিউজ়িয়ামের দেখভাল ঠিক মতো হচ্ছে না। মিউজ়িয়ামের দু’টি ঘর পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘরগুলিতে কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের জনজাতিদের পোশাক, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জিনিসপত্র রাখা ছিল। বাকি ঘরগুলির মধ্যে দু’টিতে সংস্কারের অভাব ফুটে উঠেছে। রাজ-আমলের কিছু জিনিসপত্রের রক্ষণাবেক্ষণও ঠিক মতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ পর্যটকদের একাংশ। তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘‘দিনে দিনে কলেবরে আরও বড় হওয়ার কথা রাজবাড়ি মিউজ়িয়ামের। সেখানে তা ছোট করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’’
দিন কয়েক আগে কোচবিহার রাজবাড়ি দেখতে কলকাতা থেকে সপরিবারে এসেছিলেন প্রতাপ চক্রবর্তী। রাজবাড়ি মিউজ়িয়াম ঘুরে দেখার পরে তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে আমি রাজবাড়িতে এসেছিলাম। সেই সময় জনজাতিদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্র মিউজ়িয়ামে দেখেছিলাম। এ বারে তা নেই। হতাশ হলাম।’’
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার দাবি তুলেছেন, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কোচবিহারকে একটি সার্কেল ঘোষণা করুক। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহার রাজবাড়ি মিউজ়িয়ামের দেখভাল ঠিক মতো হয় না। জনজাতিদের পোশাক ও ব্যবহার করা জিনিসপত্র নিয়ে মিউজ়িয়ামের যে দুটো ঘর ছিল তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কোচবিহারকে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সার্কেল ঘোষণা করা উচিত। এখন রায়গঞ্জ সার্কেল থেকে রাজবাড়ি দেখাশোনা করা হয়। কোচবিহারে সার্কেল হলে অনেকটা কাজ হবে।’’
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজবাড়ি মিউজ়িয়ামের যে কয়েকটি ঘর রয়েছে তার একটি রাজাদের দরবার হল। সেখানে রাজ পরিবারের ছবি, সেই সময়ের ব্যবহার করা গাড়ির ছবি, রাজাদের শিকারের ছবি রয়েছে। তার পরেই কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে হয়। উপরের একটি ঘরে রাখা রয়েছে বিলিয়ার্ড, রাজ আমলের ব্যবহার করা আরও কিছু জিনিসপত্র। এ ছাড়াও আরও তিনটি ঘর রয়েছে যেখানে রয়েছে রাজ আমলের অস্ত্র এবং বিভিন্ন মূর্তি। অস্ত্রের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যা বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে যে পুরনো দেবদেবীর উদ্ধার হওয়া মূর্তি রাখা রয়েছে সেখানে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মিউজ়িয়াম উন্নয়নের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হলে উন্নতি হবে। না-হলে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’’
পড়ন্ত বিকেলে, সূর্যের একফালি আলো এসে পড়েছে রাজবাড়ির চূড়ায়। সবুজ বাগিচায় ফুটে আছে বোগেনভেলিয়া। অলিন্দের ফাঁকে বাসা বেঁধেছে টিয়ার দল। এমন অপার সৌন্দর্যের মাঝে থেকেও মলিনতা ঘিরে ধরেছে মিউজ়িয়ামকে। তার সুদিন ফিরবে কি না, সময় বলবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)