গরু পাচার সন্দেহে পিটিয়ে মারার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে। প্রতীকী চিত্র।
গরু পাচারকারী সন্দেহে ফের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। শীতলখুচি ব্লকের লালবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়মরিচা এলাকার ঘটনা। মৃত ওই ব্যক্তির নাম জালাল মিয়া (৪০)। পরিবারের অভিযোগ, পাচারকারী সন্দেহে শনিবার রাতে ওই ব্যক্তিকে আটক করে বেধড়ক মারধর করেন বিএসএফের জওয়ানেরা। রবিবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে শীতলখুচি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে রেফার করা হয় মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে জালালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বিসএসএফ দাবি করেছে, শনিবার রাতে জালাল মত্ত অবস্থায় ছিলেন। গরু পাচার করার সময়ে তিনি ধরা পড়েন। সে সময়ে বিএসএফ বাধা দিলে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়। অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলেই জালাল মারা যায়। ওই ব্যক্তিকে মারধর করা হয়নি। মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিস সুপার অমিত ভার্মা বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মৃতদেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, জালাল মিয়া দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। ১৫ দিন আগে রমজান উপলক্ষে তিনি বড়মরিচার বাড়িতে এসেছিলেন। শনিবার রাত আটটা নাগাদ তিনি স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যান। তার পর থেকে তাঁকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার দুপুরে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, জালালের মৃতদেহ মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে রয়েছে। পরিবারের লোকজনের দাবি, গত কাল সন্ধ্যায় যখন জালাল মিয়া বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, তখন তাঁর গায়ে লুঙ্গি ও শার্ট ছিল। কিন্তু মৃতদেহের গায়ে রয়েছে বিএসএফের শার্ট ও প্যান্ট।
এ দিকে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নুর ইসলাম মিয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের ওই এলাকায় শনিবার রাতে পাচারকারীদের কাছ থেকে গরু উদ্ধার করেছে বিএসএফ। পাচারকারীরা পালিয়ে গেলেও স্থানীয় বাসিন্দা জালাল মিয়াকে রাস্তায় একা পেয়ে তুলে নিয়ে যান বিএসএফের ৭৫ ব্যাটলিয়নের জওয়ানেরা। ওই সময়ে হাল্কা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রাস্তায় কেউ ছিল না। ফলে রাতে বিষয়টি কেউ জানতেই পারেননি। এ দিন দুপুরে হাসপাতালে জালালের মৃত্যু হওয়ার পরে গোটা বিষয়টি জানা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিএসএফের এ ধরনের অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়াযায় না।’’
এ দিন খবর পেয়ে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে যান মাথাভাঙার অতিরিক্ত মহকুমা শাসক কে. ডি ভুটিয়া। তিনি বলেন, ‘‘বিএসএফ জওয়ানেরা এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তাঁকে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেছেন। আমি মৃতদেহ দেখলাম। শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কী করে মৃত্যু হল তা ময়না- তদন্তের রির্পোট এলেই বোঝা যাবে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, উনি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন গায়ে লুঙ্গি, শার্ট ছিল। এখন মৃত ব্যক্তির গায়ে প্যান্ট, শার্ট রয়েছে।’’
মৃতের স্ত্রী হাফিজা বিবি জানান, স্বামী দিল্লিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। রমজান মাসের জন্য ১৫ দিন আগে এসেছেন। শনিবার ৮টা নাগাদ চা খাওয়ার পরে মসজিদে নামাজ পড়তে যান। হাফিজার কথায়, ‘‘অনেক রাত পর্যন্ত ফিরে না আসায় আমি ছেলেকে নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি। রবিবার জানতে পারি আমার স্বামীর দেহ মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে রয়েছে। লুঙ্গি ও শার্টের পরিবর্তে তার গায়ে বিএসএফের প্যান্ট ও শার্ট পড়ানো রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy