Advertisement
০৫ জুলাই ২০২৪
Chopra

চোপড়া: ‘অত্যাচার চলে, মুখ খুলবে কে’

লক্ষ্মীপুরের নবীনদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক। এলাকায় যাঁরা, তাঁদের কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ চা-বাগানের শ্রমিক। লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জনসংখ্যা ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই।

যুবক-যুবতী নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে শিরোনামে উত্তরবঙ্গের গ্রাম দিগলগাঁও।

যুবক-যুবতী নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে শিরোনামে উত্তরবঙ্গের গ্রাম দিগলগাঁও। —ফাইল চিত্র।

অভিজিৎ পাল
চোপড়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৯:১৩
Share: Save:

যুবক-যুবতী নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে শিরোনামে উত্তরবঙ্গের গ্রাম দিগলগাঁও। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রাম আপাত ভাবে আর-পাঁচটা গ্রামের মতো হলেও, এই পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকা নাকি বছরখানেক আগেও গুলি-বোমার শব্দে কম্পমান থাকত। লুটপাটের ঘটনাও ছিল নৈমিত্তিক। স্থানীয়দের কেউবলছেন, এখন তেমন আর নেই। আবার ষাটোর্ধ্ব স্থানীয় ভ্যান-চালকের ভিন্ন মত— ‘‘অত্যাচার খুব চলে! কিন্তু মুখ খুলবে কে!’’

লক্ষ্মীপুরের নবীনদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক। এলাকায় যাঁরা, তাঁদের কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ চা-বাগানের শ্রমিক। লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জনসংখ্যা ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই। পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ না পেয়ে শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেন। পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের জাহাঙ্গির আলম বলছেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা দিল না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য যা টাকা দিয়েছে, তাতে সবার হয়নি। এলাকার প্রধান রাস্তা এক সময় পাকা ছিল। ভেঙে গিয়েছিল। এখন নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ভিতরের পাড়ার রাস্তাগুলি কাঁচা। কাদায় হাঁটা কঠিন।’’

এক সময় এই এলাকা কংগ্রেসের ‘ঘাঁটি’ ছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য অশোক রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের বাধায় গত পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যায়নি। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমাদের লোকজন প্রতিরোধ করেছিলেন। সে সময়ে তিন কর্মী মারা গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখন তৃণমূলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা তুলছে। বছর পাঁচেক আগে এই জেসিবির উত্থান।’’ জাহাঙ্গিরের দাবি, ‘‘বিরোধীরা এখন মিথ্যে রটাচ্ছে।’’

এলাকায় যুবক-যুবতীতে নিগ্রহে ধরা পড়া তাজিমুল ইসলামের ছায়া-সঙ্গী হিসেবে তাঁর ভাইপো গির আলম এবং মেহবুব নামে দুই যুবকের কথা শোনা গিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জনের বিরুদ্ধেই তোলাবাজি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন কয়েক জন। গির আলমের খুড়তুতো ভাই শাহ আলম বলেন, ‘‘এ সব মিথ্যা। রাজনৈতিক অপপ্রচার।’’ গির আলম কৃষিকাজে যুক্ত বলে তাঁর দাবি।

এলাকার কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, তাজিমুল ইসলাম গ্রেফতারের পরে এখন কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে তাঁর বা তাঁর সঙ্গীদের ছবি ছড়ালেও প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটে থাকছেন। তাজিমুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি ‘নিগৃহীত’ যুবতী। ভিডিয়ো ছড়ানোয় তাঁর সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে বলেছেন, ‘‘যে ভিডিয়ো ছড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধেই আমার অভিযোগ। আর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি।’’

মঙ্গলবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ‌ বোসের বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে চোপড়ায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাননি তিনি। স্থানীয় বিধায়ক হামিদুল রহমানকে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ‘শো-কজ়’ করেছে তৃণমূল। তিনি রাজ্যপালের না আসা প্রসঙ্গে এ দিন বলেন, ‘‘ চেয়েছিলাম, রাজ্যপাল এলাকায় আসুন। উনি এলে জানতে পারতেন। কী ঘটেছিল, কী ঘটেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chopra abuse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE