অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
হে সখা, মম হৃদয়ে রহো...।
ইলেক্ট্রিক কেটলিতে জল গরম করছেন। চা বানাবেন। কথা বলছেন ফাঁকে ফাঁকে। আর গুছিয়ে নিচ্ছেন চা পাতা। হেঁশেলে এখন এইটুকুই যাতায়াত তাঁর। গত বছর চলে যান এত দিনের সঙ্গী, স্ত্রী রত্না ভট্টাচার্য। তার পর থেকে রান্নাঘরে ঢুকতে হচ্ছে। কিন্তু বয়সের কারণে কিছু কাজে ভুল হয়েই যায়। তাই সর্বদা নজর রাখেন বৌদি (দাদা প্রদীপ ভট্টাচার্যের স্ত্রী) বন্যাদেবী, বাড়ির পরিচারিকা বা অন্য কেউ।
তিনি অশোক ভট্টাচার্য। বাম জমানার দাপুটে মন্ত্রী। কিছু দিন আগে পর্যন্ত শিলিগুড়ির বিধায়ক ও মেয়র। গমগম করত শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির বাড়ি। কখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কখনও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তা ছাড়া শহরের নেতা-কর্মীরা তো আছেনই। রত্নার অভাবে সেই বাড়ি এখন যেন খাঁ খাঁ করছে।
শিলিগুড়ি সিপিএমে কান পাতলেই একটা কথা শোনা যায় এখন— ২০২০-২১ দাদার (অশোক ভট্টাচার্যের) জন্য ভাল যায়নি। নিজের করোনা হল। বৌদি চলে গেলেন। ভিতরে ভিতরে খুব ধাক্কা খেয়েছেন দাদা। মুখে সে ভাবে বলেননি। তবে সমাজ মাধ্যমে একটা পোস্টেই কষ্টটা ধরা পড়েছে। তার পরে বিধানসভায় তৃতীয় হয়ে হার। জামানত জব্দ।
এখান থেকে কি ফিরতে পারবেন তিনি?
স্ত্রীর বিয়োগ ব্যথা ভুলতে তিনি রবীন্দ্রনাথের গানে ডুব দিয়েছিলেন। ‘সংসারে সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহো’। শুনছেন রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদও। ভোটে হারের পরে জোর দেন লেখালেখিতে। ঘরোয়া ভাবে বলেওছিলেন, ‘‘প্রয়োজনে লেখাপড়া নিয়েই থাকব।’’ লেখেন ‘নগরায়ন, নগর অর্থনীতি, করোনা পূর্ব, করোনা উত্তর’। শেষ লিখেছেন ‘ফিরে দেখা আমার তিনটি দশক’। করোনা পূর্ব...বইয়ের উদ্বোধন করেন সৌরভ। সেই সৌরভ, যিনি সুভাষপল্লির এই বাড়িতে বহুবার এসেছেন। রত্নাকে কাকিমা ডাকতেন। পাত পেড়ে তাঁকে খাইয়েছিলেন অশোকজায়া। এখনও বাড়ির পুরনো টিনের চালা বসার ঘরে তাঁর ছবি সাজানো। এখনও সৌরভ পরামর্শ নেন অশোকের।
এখনও বুদ্ধবাবুর ফোন আসে এই বাড়ির বাসিন্দাটির কাছে। সেই ফোনেই এখনও ভোটে না-দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় অশোককে।
তবে স্ত্রী রত্নার অভাব বেশ বোধ করছেন এ বারের ভোটের লড়াইয়ে। অশোক নিজেই বললেন, ‘‘ও থাকলে অনেক কথা হত। সমালোচনা করত, পরামর্শ দিত। এখন সব কথা বলার জায়গা নেই। মনে হয়, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখব।’’
সৌরভ বরাবর বিখ্যাত নিজের ‘কামব্যাকের’ জন্য। তাঁর মতোই অশোকও কি এ বারে পুরভোটে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? শিলিগুড়ি কিন্তু চুপ।
আর সুভাষপল্লির বাড়িতে গুনগুন সুর ঘুরছে— ‘হে সখা মম হৃদয়ে রহো’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy