অশোকের দাবি, শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপি-র চেয়েও বেশি ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ করেছে তৃণমূল।
‘রাজনৈতিক প্রত্যাখ্যান’-এর তত্ত্ব থেকে সরে এসে শিলিগুড়ি পুরভোটে বিপর্যয়ের জন্য এ বার তৃণমূলের ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’-কে দায়ী করলেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। অশোকের দাবি, এই পুরভোটে বিজেপি-র চেয়েও বেশি ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ করেছে তৃণমূল। এর জন্য রাজ্যের এক মন্ত্রীকেও বিঁধেছেন তিনি।
শিলিগুড়ি পুরভোটে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ আলম খানের কাছে নিজেও হেরে গিয়েছেন অশোক। সোমবার ভোটের ফল প্রকাশের দিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনে বামেদের রাজনৈতিক প্রত্যাখ্যান হয়েছে। গত লোকসভা এবং বিধানসভায় যে ভোটব্যাঙ্ক বিজেপি-তে গিয়েছিল, তা বামেদের ঘরে ফিরে আসার বদলে তৃণমূলের ঘরে ঢুকেছে।’’ অশোকের এই মন্তব্যের জেরে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বাম-নেতৃত্বকে।
এর পর বৃহস্পতিবার অশোকের দাবি, তাঁর হারার কথাই ছিল না। ভোটের আগে তৃণমূল সংখ্যালঘু ভাবাবেগ উস্কে দিয়েছে বলেই তাঁকে হারতে হয়েছে। অশোকের ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি-র মতো সাম্প্রদায়িক দলের উত্থান পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড়ই উদ্বেগের কারণ। তবে এ বারের পুরনির্বাচনে তৃণমূলই বিজেপি-র মতো কাজ করেছে। আমি বলব, পুরনির্বাচনে বিজেপি যত না সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি করেছে তৃণমূল। বিভিন্ন ধর্মগুরু, ইমাম, নেপালি আর মতুয়া সম্প্রদায়কে উস্কে দিয়েছে ওরা। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়েছে। আমি যে ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানে আমার হারার কথাই ছিল না। কিন্তু প্রায় ৫০ শতাংশ মুসলিম ভোট চলে গিয়েছে তৃণমূলে। কেউ ভাবেনি আমাদের এই ফল হবে।’’
রাজ্যের এক মন্ত্রীকে বিঁধে অশোক বলেন, ‘‘আমরা আগে কখনও দেখিনি হিন্দু ভোট আর মুসলিম ভোট আলাদা করে দেখা হচ্ছে। ভোটের আগে যে মন্ত্রী এখানে এসেছিলেন, তিনিই সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের দিকে নিয়ে গিয়েছেন। ধর্মের নামে ভোট না হলে নিজের ওয়ার্ড থেকে কখনওই হারতাম না আমি।’’
ভোটগ্রহণের আগে শেষ বার শিলিগুড়িতে প্রচারে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেই সময় অরূপের বিরুদ্ধে রাজ্য নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন অশোক। তাঁর অভিযোগ ছিল, শেষ বেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠকে সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ উস্কে দিচ্ছেন মন্ত্রী। কমিশনের কাছে তাঁর আবেদন ছিল, অরূপকে শীঘ্র শিলিগুড়ি ছাড়তে বলা হোক। মনে করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার নাম না নিয়ে অরূপকেই দুষলেন অশোক।
তবে অশোকের ব্যাখ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে শিলিগুড়ির ভাবী-মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা সব মানুষের কাছে গিয়েছি। তৃণমূলকে জাতপাতের ভোট করে জিততে হয় না। অশোকবাবুরা এ সব বলতে থাকুন। এর পর মিউজিয়ামে এঁদের স্মৃতিসৌধ তৈরি হলে মানুষ দেখতে যাবে। ওঁরা যত ভুল ব্যাখ্যা করবেন, তত দল নীচের দিকে যাবে।’’
পুরনির্বাচনে তৃণমূল ইভিএমেও কারচুপি করে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অশোক। তিনি বলেন, ‘‘ভোট শেষেই তৃণমূলের মিছিল বার হয়। ওদের অনেক নেতা-নেত্রীদের বলতে শোনা যায়, ৩৭ আসন পাবে তৃণমূল। কী ভাবে এটা ওরা বলল? তা হলে কি ইভিএমে কোনও ব্যাপার আছে?’’
এ প্রসঙ্গে গৌতম অবশ্য বলেন, ‘‘অশোকবাবুর এ ধরনের কথার উত্তর দিতেই আমার ইচ্ছে করে না। সবার সামনেই তো ভোট হল। ওরা জিতলে ইভিএম ঠিক থাকে, আর হারলে ইভিএম খারাপ হয়। পরাজয় সহজ ভাবে মেনে নিতে শিখতে হয়। সেটাও যদি উনি না শেখেন, তা হলে সেটা ওঁর সমস্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy