শিশু কোলে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
অ্যাডিনো ভাইরাসে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে রাজ্যে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতেও সর্দি-কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের কোনও হাসপাতালেই ওই রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলে অনেক শিশু এক সঙ্গে জড়ো হয়। কারও জ্বর-সর্দি থাকলে মাস্ক পরাতে হবে। জরুরি কিছু না থাকলে, স্কুলে পাঠানো ঠিক নয়। পরীক্ষা থাকলে, অসুস্থ শিশুদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যে শিশুরা কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত, তাদের বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এ নিয়ে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন কোচবিহার মেডিক্যালের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়, এমএসভিপি রাজীব প্রসাদ ও মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান কল্যাণব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, এই পরিস্থিতিতে জ্বর-সর্দি-কাশির জন্য আলাদা ভাবে প্রতিদিনের জন্য হাসপাতালে একটি বিশেষ বর্হিবিভাগ চালু করা হল। যা চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। জরুরি বিভাগে চব্বিশ ঘণ্টা এক জনশিশুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকবেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ছুটি না নিতে আর্জি জানানো হয়েছে। জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া বা ‘রেফার’ করা যাবে না। করোনার সময়ে আলাদা ওয়ার্ড তৈরি হয়েছিল।সেখানে সব ঠিক করে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে অ্যাডিনো ভাইরাসের (সন্দেহজনক) রোগীদের ভর্তি করা হবে। সন্দেহজনক রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হবে এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কল্যাণব্রত এ দিন বলেন, ‘‘এখনও আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু সতর্কতা প্রয়োজন। আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত।’’
কোচবিহারের চারটি মহকুমা দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জে ৬৭টি শিশু জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কোচবিহার মেডিক্যালে সেই সংখ্যা শতাধিক। এমজেএন মেডিক্যালে ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু), ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (পিকু)-সহ শিশু ভর্তির জন্য ৯০ আসন রয়েছে। এখন রোগীর ভিড়ে ঠাসাঠাসি চলছে। বর্তমানে চার জন রোগী সন্দেহের তালিকায়। তার মধ্যে একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে অনেকেই ভর্তি রয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি।’’ কোচবিহার মেডিক্যালের এমএসভিপি রাজীব প্রসাদ বলেন, ‘‘পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’
জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগতে থাকা শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে আলিপুরদুয়ারে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত এক সপ্তাহে জেলার তিনটি বড় হাসপাতালে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ১৩৭টি শিশু ভর্তি হয়েছে। ‘সিক নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-তে ভর্তি ৩৬টি শিশু। একাধিক সূত্রের খবর, হাসপাতালে ভর্তি হতে না হলেও, জেলার নানা জায়গায় শিশুদের জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আলিপুরদুয়ারের ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক রয়েছে।” আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব বিশ্বাস বলেন, “এই সময় এমনিতেই কিছু ভাইরাসের সক্রিয়তা দেখা যায়। তার উপরে করোনা-কালে দীর্ঘ সময় শিশুরা ঘরবন্দি ছিল। আচমকা ওরা বাইরের পরিবেশে মিশছে। ফলে, সতর্ক থাকতে হবে।”
জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে জলপাইগুড়ি জেলার সব হাসপাতালেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সব ব্লকেই সতর্কতা জারি করেছে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ক্লিনিক খোলার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার। মালবাজার সুপার স্পেশ্যালিটি এবং জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে শিশু বিভাগে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের জন্য চারটি ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে বলে খবর। হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে সেগুলি লাগানো হয়েছে বলে মেডিক্যালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খান জানান। হাসপাতালে ‘এসএনসিইউ’ থাকলেও, ‘নিকু’ ও ‘পিকু’ চালুহয়নি। ফলে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসা শিশুদের পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কল্যাণ খান বলেন, ‘‘দ্রুত এই দুই ইউনিট চালুর চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy