চম্পা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
বিয়েবাড়ি কিংবা ছোট অনুষ্ঠানে বাড়তি খাবার না ফেলে, তাঁকে দিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। সে সব জড়ো করে বিলি করেন দুঃস্থ, ভবঘুরেদের মধ্যে। কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে, দুঃস্থ শিশুদের বিনামূল্যে পড়ানোতেও ছুটে যান নিজের খরচে। তিনি শিলিগুড়ি শহরের লেক টাউনের বাসিন্দা চম্পা ঘোষ।
বছর বাষট্টির চম্পার দুই মেয়ে, এক ছেলে যখন ছোট, সে সময় স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল। ছোট মেয়ে তখনও কোলে। প্রতিবেশী রাজ্য অসমের বাসিন্দা ছিলেন। সঙ্কটে সন্তানদের খাবার পর্যন্ত জোটাতে পারছিলেন না বলে দাবি। চম্পা জানান, দূর সম্পর্কের এক দিদি তাঁকে শিলিগুড়িতে এনেছিলেন। শুরু হয় লড়াই। অনেক দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। মাধ্যমিক পাশ চম্পা হন্যে হয়ে ঘুরে একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে ইসিজি-সহকারীর কাজ পেয়েছিলেন। পরে, কাজ করতে করতে ইসিজি করা শেখেন। সে রোজগারেই সংসার চলত। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মায়ের সঙ্গে থাকেন না। ফলে, একাকিত্ব কাটাতে আর ফের শুরু হয় লড়াই।
যুক্ত হন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। জড়িয়ে পড়েন মানুষের সেবায়। করোনার বাড়াবাড়ির সময়ে যখন কেউ বাড়ি থেকে বেরোনোর সে ভাবে সাহস পাচ্ছিলেন না, চম্পা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে, করোনা আক্রান্তদের পরিবারের কাছে অক্সিজেন, খাবার পৌঁছে দেওয়া, এমনকি, শ্মশান পর্যন্ত মৃতদেহ পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছেন প্রায় নিত্যদিন। শিলিগুড়ি শহরের চম্পাসারির বাসিন্দা বিদ্যুৎ পোদ্দারের অভিজ্ঞতা, ‘‘করোনা-পর্বে চম্পা বাড়িতে আনাজ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিয়েছেন।’’
করোনা-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও লড়াই থেমে নেই চম্পার। নিজের খরচে একটি ‘পোর্টেবল’ ইসিজি-যন্ত্র কিনেছেন। দুঃস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ইসিজির প্রয়োজন হলে ছুটে যান। চম্পা বলেন, ‘‘মেয়েরা পুজোয় শাড়ি দিলে, নতুন পোশাক হবে। আমার চিন্তা, গরিবদের নতুন পোশাক নিয়ে।’’
অতিমারির দু’বছরে দুঃস্থ ঘরের শিশুদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল দেখে বিনামূল্যে স্কুল শুরু করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সময় পেলেই সেখানে চম্পা পড়াতে যান। কোনও টাকা নেন না। সে স্কুলের এক অভিভাবক শম্পা মণ্ডলের দাবি, ‘‘করোনায় স্কুল বন্ধের পরে, পড়ায় মেয়ের মন বসত না। চম্পাদি ফের বইমুখী করেছেন ওকে।’’ চম্পা বলেন, ‘‘বাচ্চাদের হাসি, কোলাহলে শান্তি খুঁজে পাই। বাচ্চাগুলোর জন্য আরও কাজ করার সাহস পাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy