হিমালয়ের পাদদেশ থেকে সোজা অতলান্তিক মহাসাগরের পারে। জলপাইগুড়ি থেকে নতুন মায়ের সঙ্গে স্পেনে পাড়ি দিতে চলেছে হোমের একরত্তি আবাসিক। অর্থনীতির গবেষকর একাকী মাতৃত্বের অধরা স্বপ্ন এত দিনে পূরণ করল সে। সোমবার জেলাশাসকের দফতরে, সরকারি নিয়ম মেনে এক বছর তিন মাসের ওই শিশুকন্যাকে তুলে দেওয়া হল স্পেনের ওই বাসিন্দার হাতে।
শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন গর্ভধারিণী মা। পরিবার-পরিত্যক্তা সেই মেয়ের স্থান হয় কোরক হোমের অধীনে থাকা সরকারি ‘স্পেশাল অ্যাডাপশন এজেন্সি’তে (সা)। সেখানেই আরও নয়টি শিশুর সঙ্গে হোমের আধিকারিক ও কর্মীদের যত্নে বড় হয়ে উঠছিল ওই শিশুটি। একাকী মাতৃত্বের স্বাদ পেতে বিশ্ব জুড়ে হন্যে হয়ে সন্তান খুঁজছিলেন স্পেনের একটি শহরে কর্মরতা ওই মহিলা। ২০২০ সালের এপ্রিলে ‘সেন্ট্রাল অ্যাডাপশন রিসোর্স অথরিটি’তে (কারা) আবেদন জানান তিনি। ‘অথোরাইজড ফরেন অ্যাডাপশন এজেন্সি’ (আফা) 'হোম স্টাডি' করে রিপোর্ট পাঠায় কারা-তে। গত বছরের অগস্টে ওই শিশুকে ‘রিজার্ভ’ করেন স্পেনের ওই মহিলা। আরও কিছু প্রক্রিয়ার পরে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে, অনলাইন ম্যাচিং ও শুনানির পরে, দত্তক গ্রহণে সবুজ সঙ্কেত দেন জেলাশাসক শমা পরভীন। ফেব্রুয়ারিতে ওই শিশুকন্যার নতুন করে জন্ম-শংসাপত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। এ দিন ওই মহিলা তাঁর এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে পৌঁছন। দফতরের কনফারেন্স রুমে তাঁর হাতে শিশুকন্যাটিকে তুলে দেন জেলাশাসক। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক রৌণক আগরওয়াল, জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদীপ ভদ্র, কোরক হোমের সুপার গৌতম দাস।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পরে তিরিশটি শিশুকে নতুন পরিবার দিতে পেরেছি। এই শিশুটি নতুন মা পেল। ও নতুন জীবনে খুব ভাল থাকুক, এটাই চাই।’’ কোরক হোমের সুপার বলেন, ‘‘শিশুটি চলে যাচ্ছে দেখে আমাদের মন বিষন্ন হয়ে রয়েছে। তবে, ওর ভবিষ্যৎ, নতুন জীবনের কথা ভেবে ভালও লাগছে।’’ শিশুটির মা বলেন, ‘‘এত দিনে সন্তান পেয়ে আমি খুব খুশি। ওকে খুব যত্নে বড় করব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)