বুধবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মায়ের। পরে বেলার দিকে মালদহের কালিয়াচক ব্লকের রাজনগর হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে এ দিন জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা দিল রাশমিরা খাতুন। রাশমিরা বৈষ্ণবনগরের চর সুজাপুর হাই স্কুলের ছাত্রী। এ দিনই পরীক্ষা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেয় আইহো গার্লস স্কুলের ছাত্রী শুভশ্রী চৌধুরী। দুই ছাত্রীরই পাশে পর্ষদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলা আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত। তিনি এই দিন বলেন, “মাকে হারিয়েও রাশমিরা পরীক্ষা দিচ্ছে। আর শুভশ্রী অসুস্থ হয়েও পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। জেলার দুই লড়াকু মেয়েরই পাশে পর্ষদ রয়েছে।”
জানা গিয়েছে, রাশমিরা ফরাক্কা থানার পার সুজাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা রাশিদ শেখ শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর স্ত্রী হাজরা বিবি (৬২) হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ দিন ভোরে মারা যান তিনি, দাবি পরিবারের। সকালেই তাঁর দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নিজেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যায় রাশমিরা। সে জানায়, “মাধ্যমিকের আর দুটো পরীক্ষা বাকি। আমাকে পড়ানোর জন্য মা বিড়ি বাঁধতেন। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দিয়েছি।” বাবা রাশিদ বলেন, “মেয়ের পড়াশোনার খুব ইচ্ছে। মাধ্যমিকের প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলিও ভাল দিয়েছে। এর মধ্যে তার মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, তা কখনও ভাবতে পারিনি।”
রাশমিরার পাশে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থাকায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন চর সুজাপুর হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল তালুকদার। তিনি বলেন, “পর্ষদ তড়িঘড়ি রাশমিরার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। রাশমিরা পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পড়াশোনায় ysNভাল।” এ দিকে, হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী আরএন রায় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ে শুভশ্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে তড়িঘড়ি ভর্তি করেন বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে। হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দেয় শুভশ্রী।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)