Advertisement
E-Paper

বিরল ‘বম্বে’ গ্রুপের রক্ত জুড়ল ওঁদের

শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি লঙ্কাপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা অ্যান্টোনিয়া ভুগছেন জরায়ুর ক্যানসারে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সপ্তর্ষি ঘোষ বলেন, “কেমোথেরাপি দিতে হলে রক্তাল্পতার সমস্যা হয়। তার মোকাবিলা করতেই রক্ত দিতে হয়।”

— প্রতীকী চিত্র।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১০:০০
Share
Save

‘বম্বে গ্রুপ’-এর রক্ত প্রয়োজন ক্যানসার আক্রান্তের। আহ্বান পেয়ে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রক্ত দিতে গিয়ে, ডুয়ার্সের ডিমডিমা চা বাগানের পাসকেল কুজুর জানলেন, যাঁর জন্য তিনি রক্ত দিতে গিয়েছেন, সেই অ্যান্টোনিয়া তাঁর দূর-সম্পর্কের বোন।

শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি লঙ্কাপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা অ্যান্টোনিয়া ভুগছেন জরায়ুর ক্যানসারে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সপ্তর্ষি ঘোষ বলেন, “কেমোথেরাপি দিতে হলে রক্তাল্পতার সমস্যা হয়। তার মোকাবিলা করতেই রক্ত দিতে হয়।” সে জন্য তিন বোতল রক্ত মজুত রাখতে বলেছেন ডাক্তার। অ্যান্টোনিয়ার স্বামী ডোমিনিক টোপ্পো বলেন, “আমাদের টাকার টানাটানি। তা ছাড়া, টাকা দিয়েও এই গ্রুপের রক্ত মেলে না। শেষে খোঁজ পাই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। তাঁরা এক ইউনিট রক্ত জোগাড়ের ব্যবস্থা করেন।’’

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যোগাযোগ করেছিল জলপাইগুড়ির পম্পি সূত্রধরের সঙ্গে। যাঁদের দরকার, তাঁদের জন্য রক্ত বা রক্তদাতা জোগাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করাই নেশা রক্তদাতাদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোর্নাস সোসাইটি’র এই সদস্যার। তিনি যোগাযোগ করেন পাসকেলের সঙ্গে, ‘বম্বে গ্রুপ’-এর রক্ত বইছে যাঁর শরীরে।

১৯৫২ সালে অতি বিরল এই ‘গ্রুপ’ সম্পর্কে প্রথম জানা যায়। মুম্বই তথা তৎকালীন বম্বেতে এই রক্তের গ্রুপের প্রথম খোঁজ মেলে বলে নামকরণ হয় ‘বম্বে গ্রুপ’। রক্তের এই ‘গ্রুপ’ সাধারণত ৪০ লক্ষের মধ্যে এক জনের হয়। তবে ভারতের মুম্বই ও লাগোয়া এলাকায় প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে এক জনের এই ‘গ্রুপ’-এর রক্ত মিলতে পারে। চিকিৎসকেরা জানান, সাধারণত একই পরিবারের দুই বা তিন জনের মধ্যে রক্তের এই ‘গ্রুপ’ দেখা যায়।

রক্তদাতাদের ওই সংগঠনের রাজ্য সহসভাপতি চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্ত বলেন, “বম্বে গ্রুপের রক্ত কাদের রয়েছে, তার রাজ্যওয়াড়ি তালিকা রয়েছে। সেখান থেকে জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে। হয়তো রক্ত জোগাড় করতে কষ্ট হবে, সময় লাগবে। কিন্তু পাওয়া যাবে।”

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার রক্ত দিতে আসা পাসকেল বলেন, “জানতাম, আমার রক্তের গ্রুপ খুবই বিরল। ফোন পেয়ে ভাবলাম, আমি রক্ত না দিলে, রোগী রক্তই পাবেন না। তাই নিজেই রওনা দিই। এসে দেখি, যার জন্য রক্ত দেওয়া সে আমারই দূর সম্পর্কের বোন। মাঝে যোগাযোগ ছিল না।” তাঁর সংযোজন: ‘‘বোনের জন্য রক্ত চেয়ে যে দিদি ফোন করলেন, তিনিও আমাদের আত্মীয়ের মতো।’’

মৃদু হাসেন রক্তদানের পরে পাসকেলকে চারাগাছ উপহার দেওয়া পম্পি। তিনি বলেন, “পাসকেল যাতায়াতের ভাড়া নেননি। বীরভূমের এক জনের ‘বম্বে’ গ্রুপের রক্ত আছে শুনে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তিনি আসতে পারবেন না বোধ হয়। আরও কয়েক জনের খোঁজ পেয়েছি। জোগাড় করতেই হবে আরও দুই ইউনিট বম্বে গ্রুপের রক্ত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cancer treatment Cancer Blood Donation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}