বড়দেবীর প্রতিমার ‘শক্তিদণ্ড’ বসাতে ময়না কাঠ জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ। দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের রাজাদের আমলে শুরু হওয়া প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন বড়দেবী পুজোর অন্যতম প্রধান উপকরণ ময়না কাঠ। প্রায় ১১ ফুট লম্বা পোক্ত ময়না কাঠের ডাল কেটে প্রতিমার কাঠামোয় শক্তিদণ্ড হিসাবে বসানো হয়। রীতি মতো পূজার্চনার পরে শুরু হয় বড়দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ। আগামী ২৩ অগস্ট যূপচ্ছেদন পুজোর মাধ্যমে ওই প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রয়োজন মতো ময়না কাঠের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি দেবোত্তর ট্রাস্টের কর্তারা। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য তথা কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “জেলা তো বটেই, ডুয়ার্সের বিভিন্ন বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকা থেকে ময়না কাঠ জোগাড়ের সব রকম চেষ্টা হচ্ছে। বন দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।”
ট্রাস্ট সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত কয়েকবছর ধরেই ময়না কাঠের সংস্থান করা নিয়ে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বছর সাতেক আগে কোচবিহার মদনমোহন মন্দির লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি ময়না গাছ লাগানো হয়। গত বছর ওই মন্দির চত্বরের একটি গাছের ডাল কেটে শক্তিদণ্ড তৈরির কাজে লাগানো হয়। এ বারেও শুরু থেকে ট্রাস্ট কর্তাদের একাংশ তাই সমস্যা হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু পুজোর দিন এগিয়ে আসতেই তাঁদের চিন্তা বেড়েছে চাহিদা অনুযায়ী গাছের ডাল না থাকায়। বোর্ডের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “শক্তিদণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ময়না কাঠের দৈর্ঘ্য ১১ ফুট হতে হবে। শক্তপোক্ত, সোজা ডাল ছাড়া কাজ হবে না। কিন্তু মদনমোহন মন্দির চত্বরের গাছে তেমন ডাল নেই। বনচুকামারি থেকে এক সময় ওই কাঠ আনা হত। সেখানেও যোগাযোগ করে চেষ্টা কাঠ জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে।”
ট্রাস্ট সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২৩ অগস্ট ময়না গাছের ডাল কেটে নিয়ে গুঞ্জবাড়ি ডাঙ্গোরাই মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই দিন সেটিকে দেবীরূপে কল্পনা করে পুজো দেবেন পুরোহিত। যা যূপচ্ছেদন পুজো নামে বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত। পুজোর পর কাঠটিকে পালকিতে করে মদনমোহন মন্দিরে আনা হবে। টানা এক মাস রীতি মেনে ওই মন্দিরে সেটির পূজা হবে। পরে তিথি অনুযায়ী ওই ময়না কাঠ দেবীবাড়ি মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ‘হাওয়া খাওয়া’ পুজোর তিন দিন বাদে ওই কাঠটি কাঠামোয় শক্তিদণ্ড হিসাবে শুরু হবে প্রতিমা তৈরির কাজ। কিন্তু সেই কাঠ জোগাড় না হওয়ায় নিয়ম মেনে প্রতিমা তৈরি কাজ করা যাবে কি না, তা নিয়েই চিন্তা বেড়েছে ট্রাস্টের। কোচবিহার রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সি অবশ্য বলেন, “বড়দেবীর পুজোয় অসংখ্য উপকরণ দরকার হয়। ফি বছর খানিকটা সমস্যা হলেও কোনও দিন কাজ ঠেকে থাকেনি। ময়না কাঠ কোনও না কোনও জায়গা থেকে পাওয়া গিয়েছে। এবারেও ঠিক ব্যবস্থা হবে।” আপাতত সেই বিশ্বাস আর আশাতেই বুক বেঁধে আছেন বড়দেবীর ভক্তরা।