ছবি রয়টার্স।
পঁয়ষট্টি শতাংশ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে টানা সাত দিনের পাঞ্জা কষাকষি শেষ হল সোমবার দুপুরে। তবে সিবিআইয়ের বক্তব্য, মৃত্যুর আগে তাদের হাতে ব্রহ্মাস্ত্র তুলে দিয়ে গিয়েছেন রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের নাজিমা বিবি। তিনি মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে এমন কিছু তথ্য দিয়ে গিয়েছেন, যা অভিযুক্তদের কঠিন সাজার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীদের দাবি।
সিবিআই সূত্রের খবর, চিকিৎসক এবং নাজিমার স্বামী শেখলাল শেখের উপস্থিতিতে ওই মহিলার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি (আইনের ভাষায় ‘ডাইং ডিক্লেয়ারেশন’) গ্রহণ করা হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নিয়ে সিবিআইয়ের ডিআইজি অখিলেশ সিংহের নেতৃত্বে তদন্তকারী দলটি যখন রামপুরহাট হাসপাতালে বগটুই কাণ্ডে অন্য আহতদের বয়ান নথিভুক্ত করছিলেন, তখনই কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপস্থিতিতে নাজিমার বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। এক বার নয়, বার বার। সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২৫ মার্চ, শুক্রবার থেকে প্রতিদিন কোনও না-কোনও সময়ে তদন্তকারী অফিসারেরা ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে যেতেন এবং চিকিৎসকের উপস্থিতিতে তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করতেন।
সিবিআইয়ের দাবি, ২১ মার্চ রাতে তাঁদের উপরে ঠিক কী ধরনের হামলা হয়েছিল, কারা চড়াও হয়েছিল বাড়িতে, তাদের চেহারা কী রকম—দগ্ধক্ষতের যন্ত্রণার মধ্যেই ধীরে ধীরে তদন্তকারীদের তা জানিয়েছিলেন নাজিমা। এক-এক বার নাজিমার বয়ান নেওয়া হয়েছে এবং তা সরেজমিনে মিলিয়ে দেখতে তাঁর বাড়ি গিয়েছেন তদন্তকারীরা। নাজিমার স্বামী শেখলালের বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, হামলার সময় শেখলাল প্রাণভয়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বগটুইয়ের এক মহিলা ও যুবক নাজিমাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।
আইনজীবীদের বক্তব্য, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে যে-কোনও মামলাতেই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। আইন অনুযায়ী কোনও মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি সাধারণত মিথ্যা কথা বলেন না। তিনি যখন বুঝতে পারেন যে, তাঁর মৃত্যু আসন্ন, তখন মিথ্যা তথ্য দেন না। হাই কোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে বেদ-উপনিষদের সমতুল্য সত্য বিবৃতি বলে বিবেচনা করা হয়।’’
ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট-এর ৩২ নম্বর ধারায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দির বিষয়ে এই ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। বহু মামলাতেই বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার মূল অবলম্বন হিসেবে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে হাতিয়ার করার নজির রয়েছে।
সোমবার নাজিমার মৃত্যুর পরে তাঁর স্বামীর অভিযোগ, ‘‘ভাদু শেখ (বগটুইয়ের নিহত উপপ্রধান) এক জন অপরাধী। তার সঙ্গে যোগসাজশ ছিল রামপুরহাট থানার আইসি এবং এসডিপিও-র।’’ বগটুইয়ের হামলায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দিকেও পরোক্ষে আঙুল তুলেছেন নাজিমার স্বামী।
এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘নাজিমা এবং তাঁর স্বামীর বয়ান অনুযায়ী তাঁদের বাড়ির আনাচকানাচ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে সিএসএফএল টিম।’’ শুধু নাজিমার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নয়, নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে সেই অন্তিম বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করার কার্যপ্রণালীও সম্পূর্ণ করা হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি।
আলিপুর আদালতের প্রাক্তন মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এমন শক্তিশালী আইনি হাতিয়ার থাকলে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দি অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ এবং তাদের হেফাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। যদি এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ তদন্তকারী সংস্থার হাতে থাকে, তা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হলেও কোনও ছাড় পাওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy