আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
মাননীয়া রাষ্ট্রপতি,
দ্রৌপদী মুর্মু,
নয়াদিল্লি
আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। সে একটা মেয়ে হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল বলেই কি, তার স্বপ্নপূরণ হওয়ার আগেই তার সঙ্গে নির্মম, নিষ্ঠুর, পৈশাচিক এই ঘটনা হল? তার স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করা হল? যে বা যারা এই ঘটনা ঘটাল, তাদের আড়াল করার জন্য, সব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হল?
ঘটনার রাতে ১১টা ১৫ মিনিটে মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখনও ও হাসিখুশি ছিল। সকালে আমার মেয়ে আর নেই! যা-ই ঘটুক না কেন, মা-বাবা হিসেবে তো আমাদের জানানো উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওঁদের দায়িত্বেই তো আমরা মেয়েটাকে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। আমাদের কাছে হাসপাতাল থেকে প্রথম ফোন আসে সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে। বলা হয়, আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমরা তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। যেতে যেতে আবার ফোন আসে।— “অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলছি। আপনার মেয়ে সুইসাইড করেছে। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন।” আমাদের তো তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। আমাদের গাড়িচালক যত জোরে পারে চালিয়ে আমাদের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছায়। এক জন নিরাপত্তাকর্মী আমাদের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান। আমরা তখন মেয়েকে দেখার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। সেমিনার রুম-এর ভিতরে তখন অনেক লোকজন। এক জন পুলিশকর্মী দরজা আটকে দাঁড়িয়েছিলেন। আরও অনেক পুলিশ, লোকজন দরজার সামনে ছিলেন। আমি তাঁদের হাতেপায়ে ধরে বলি, “আমার মেয়েকে এক বার দেখতে দিন।” তাঁরা বলেন, “ভিতরে ফরেন্সিক তদন্ত চলছে। ঢুকতে দেওয়া যাবে না।” আমি বলি, “আমি কিছু করব না। এক বার মুখটা দেখে চলে আসব।” তা-ও দেখতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ এসে ঘটনা নিয়ে কোনও আলোচনাই করেননি আমাদের সঙ্গে। অবশেষে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরে আমাদের সেমিনার রুম-এ ঢুকতে দেওয়া হয়।
তখন সেখানে কলকাতা পুলিশের প্রধান ছাড়া কেউই ছিলেন না। তখন মেয়ের দেহ দেখে আমাদের মনে হয়, পুরো ঘটনা সাজিয়েগুছিয়ে আমাদের দেখানো হচ্ছে। কারণ, সেখানে যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার পরে সব কিছু এই রকম সাজানো থাকতে পারে না। অপরাধ যেখানে হয়েছে, সেই জায়গা ঘেরা ছিল না। যথেচ্ছ ভাবে অপব্যবহার হয়েছে। আমরা সে দিন আমাদের মেয়ের দেহ রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশ এবং প্রশাসনের অতিসক্রিয়তার কারণে সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যতক্ষণ মেয়ের দেহ চুল্লিতে প্রবেশ করানো না হয়, তত ক্ষণ পুলিশি সক্রিয়তা বজায় ছিল, তার পরে আর কাউকেই দেখতে পাওয়া যায়নি।
আমার সারা জীবনে কষ্ট করে যা অর্জন করেছিলাম, আর মেয়ের কষ্টার্জিত একরাশ স্বপ্ন— সব কিছু গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। একটা রাতে কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের পরিবার তছনছ করে দিল।
আমরা আমাদের একমাত্র ডাক্তার মেয়েকে হারিয়ে ফেললাম। কেন এমনটা হল আমাদের সঙ্গে আর আমাদের মেয়েটার সঙ্গে? সে তো ‘ওটি’ ডিউটিতে ছিল। একটা সুরক্ষিত জায়গায় ছিল। মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজের জীবন এবং নিজের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন— ওর সব কিছু দুর্বৃত্তের হাতে বলি হয়ে গেল। এই দুর্বৃত্তেরা হাসপাতালের ভিতরের লোক। কারণ, বাইরে থেকে কেউ এসে এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারে না।
অতএব, আপনার কাছে এই হতভাগ্য মা-বাবার কাতর প্রার্থনা, অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের কঠোর শাস্তির, কঠোর থেকে কঠোরতম সাজার ব্যবস্থা করুন। সেটা যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমাদের এক মাত্র মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা সামান্য লাঘব হবে।
বিনীত,
হতভাগ্য মা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy