Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Hospital

‘দিদিকে মেরে ফেলেছে ডাক্তার’, রক্ত দিয়ে লেখা পোস্টার হাতে নদিয়ার হাসপাতালে ঘুরছেন বোন!

২৫ বছরের পূজা সরকারকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পেটের সমস্যা ছিল। অভিযোগ, আইসিইউ ওয়ার্ডে অনেক স্থিতিশীল রোগী থাকলেও সঙ্কটাপন্ন রোগীকে সাধারণ শয্যায় রেখে দেওয়া হয়।

Hospital

পোস্টার নিয়ে হাসপাতালে তরুণী। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৩৫
Share: Save:

হাসপাতালের এক ওয়ার্ড থেকে আর এক ওয়ার্ডে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ছুটছেন এক তরুণী। কান্নাভেজা গলায় অস্পষ্ট উচ্চারণে ঠিক কী বলছেন, বোঝা যাচ্ছে না। তবে তাঁর হাতে ধরা পোস্টার নজর কাড়ছে হাসপাতালে আসা রোগী এবং রোগীর পরিজনদের। ওই পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘‘আমার দিদিকে মেরে ফেলেছে ডাক্তার’’! প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চিকিৎসার গাফিলতিতে দিদির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে ওই পোস্টার লিখেছেন তরুণী। রবিবার এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। তবে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, কৃষ্ণনগর হাতারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ২৫ বছরের যুবতী পূজা সরকার শনিবার রাতে পেটে যন্ত্রণা নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শুরু হলেও অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। পরিবারের দাবি, চিকিৎসকেরা আইসিইউ ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও সেখানে ভর্তির কোনও ব্যবস্থাই করেননি কর্তৃপক্ষ। এ-ও অভিযোগ, আইসিইউ ওয়ার্ডে অনেক স্থিতিশীল রোগী থাকলেও অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন পূজাকে সাধারণ শয্যায় রেখে দেওয়া হয়। রবিবার সকালে মৃত্যু হয় পূজার।

মৃতার পরিবার অভিযোগ করছে, পেটে অসহ্য যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলেন পূজা। কিন্তু এক জন নার্স তাঁকে একটি ইঞ্জেকশন দেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন ওই রোগী। চিকিৎসকের চরম গাফিলতি এবং নার্সের ভুলেই তাঁদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। দুপুরে এই পুরো ঘটনার বিবরণ জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পরিবার। এর মধ্যে মৃতার বোন নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে পোস্টার লেখেন বলে জানাচ্ছেন কয়েক জন। এর পর তাঁকে দেখা যায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। দিদির মৃত্যুর সুবিচার চাইছেন। বেশ কিছু ক্ষণ এমন চলার পর হাসপাতালে নিরাপত্তাকর্মীরা ওই যুবতীকে নিরস্ত করেন।

মৃতার আত্মীয়া সুচিত্রা সরকার বলেন, ‘‘পূজার পেটে যন্ত্রণা ছিল। যত সময় গড়িয়েছে, ওর অসুস্থতা বেড়েছে। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হাসপাতালের ডাক্তাররা ওকে দেখতে আসেননি। আইসিইউ-তে রাখার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু আইসিইউ-তে আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। তার পর নার্স তো ইঞ্জেকশন দিয়ে ওকে মেরেই ফেলল।’’

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও প্রশ্নই নেই। রোগীকে প্রয়োজন মতো পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। যে কোনও রোগীর মৃত্যু দুঃখজনক। তবে এ ক্ষেত্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’ অন্য দিকে, কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) সঞ্জয় মিতকুমার মাতোয়ান বলেন, ‘‘হাসপাতালের সুপারের কাছে পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশের কাছে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital patient death Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE