Advertisement
E-Paper

গুরুতর অসুস্থকে নামিয়ে দিল বাস, হাসপাতালের সামনেই মৃত্যু, মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্স! মায়ের দেহ নিয়ে বসে মেয়ে

শেষমেশ কয়েক জন ব্যক্তির উদ্যোগে একটি ইঞ্জিনভ্যানের ব্যবস্থা হয়। তাতেই মায়ের মরদেহ চাপিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের দিকে রওনা দেয় মেয়ে।

Krishnagar

মায়ের দেহের পাশে বসে মেয়ে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ২২:৩২
Share
Save

ওড়িশার কালাহান্ডির স্মৃতি উস্কে দিল বাংলা। হাসপাতালের অনতিদূরে মায়ের দেহ আগলে বসে রইল বছর এগারোর বালিকা। টাকার অভাবে শববাহী গাড়ি মেলেনি। মায়ের দেহ নিয়ে রাস্তার ধারে ঘণ্টা দুয়েক বসে থাকার পর একটি ইঞ্জিনভ্যান পায় সে। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।

কিডনির সমস্যা ছিল ৪৫ বছরের জাহেরা বিবির। ডাক্তার দেখাবেন বলে শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ একটি বেসরকারি বাসে তেহট্ট থানা এলাকার তরণীপুর থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে আসছিলেন তিনি। সঙ্গী নাবালক মেয়ে। কিন্তু বাসের মধ্যে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহেরা। কৃষ্ণনগরে ঢোকার আগে ঘূর্ণি এলাকায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন তিনি। তখন ওই মহিলাযাত্রীকে কৃষ্ণনগর-করিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে নামিয়ে দেন বাসের কন্ডাক্টর। ছেড়ে যায় বাস।

বছরের এগারোর মেয়েটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়া মাকে নিয়ে তখন অকূলপাথারে। কয়েক বার মাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করে সে। কিন্তু বালিকার আকুতিতে কর্ণপাত করেননি কেউ। সময় গড়ায়। ওই ভাবে বাসস্ট্যান্ডের পাশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অদূরে পড়েই থাকেন মহিলা। ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কেউ কেউ উঁকি মেরেছেন। ভিড় জমিয়েছিলেন পথচলতি মানুষদের কেউ কেউ। কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়াননি বলে অভিযোগ।

মায়ের অবস্থা দেখে কান্না বাড়ে মেয়ের। চিৎকার-আর্তনাদে জড়ো হন অনেকে। অবশেষে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসেন দু’জন আশাকর্মী। তাঁরা খানিক ক্ষণ পরীক্ষা করে মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করে চলে যান। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ দেখাননি কেউ বলে অভিযোগ।

অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে মায়ের দেহ নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা ছিল না ছোট্ট মেয়েটির কাছে। অনেকে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানোর পরামর্শ দিয়ে নিজেদের কাজে চলে যান। অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। স্থানীয় এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল মেয়েটি। তিনি ২ হাজার টাকা চান। ওই ভাবে আরও সময় গড়ায়। শেষমেশ কয়েক জন ব্যক্তির উদ্যোগে একটি ইঞ্জিনভ্যানের ব্যবস্থা হয়। তাতেই মায়ের মরদেহ চাপিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয় মেয়ে।

শববাহী গাড়ি জোগাড় করতে না পারায় স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে কালাহান্ডির সালামনি বারিকের ১২ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার ছবি এখনও অমলিন। তার মাঝে বাংলায় এমন একটি ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, ‘সমব্যথী’র মতো রাজ্য সরকারের প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন এমন একটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হল গরিব মায়ের খুদে মেয়েকে?

কৃষ্ণনগর পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বনাথ বর্মণের অবশ্য ভিন্ন দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এসে কেউ কিছু বলেননি। আমি কিছুই জানি না।’’ বাস থেকে এ ভাবে এক জন অসুস্থ, মুমূর্ষু রোগীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন ঘোষের মন্তব্য, ‘‘চূড়ান্ত অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন বাস থেকে এই ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব।’’

কৃষ্ণনগর শহর তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে অত্যন্ত নিন্দনীয়। পুরসভার টাকায় চিকিৎসকেরা মাইনে পান, কর্মীদের বেতন হয়। এত টাকা খরচ হচ্ছে। তার পরেও সাধারণ নাগরিকেরা ন্যূনতম পরিষেবা পাবেন না, এটা হতে পারে না।’’ কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘চূড়ান্ত অমানবিক! রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এর বিচার করা উচিত। পুলিশ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা, পুরসভার টহলরত কর্মীরা, কারও চোখে কেন পড়ল না এমন একটি দৃশ্য? দেখেও কেন সবাই এড়িয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে।’’ অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাস জানিয়েছেন, কী ঘটেছে তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখছেন।

Patient Dies Krishnanagar Nadia TMC BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}