Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

পৌষের উঠোন জুড়ে পিটুলির আলপনা

মকর সংক্রান্তির কাকভোরে উঠে বাড়ির সদর দরজার সামনে গোবর দিয়ে পৌষবুড়ি তৈরি করেই ছুট ঘাটে। গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী তখন শীত কুয়াশায় মাখামাখি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৪১
Share
Save

আবার সে এসেছে ফিরিয়া!

নতুন বছর পড়তেই হঠাৎ করে পিঠটান দেওয়া শীত আবার ফিরছে স্ব-মহিমায়। কনকনে উত্তুরে হাওয়া মুখে মারছে চেনা ঝাপটা। কুয়াশা ঢাকা আকাশে মিইয়ে যাওয়া সূর্য অক্ষম ঠান্ডা সে দাপট ঠেকাতে। প্রবীণেরা বলছেন, ‘‘এতো হবেই। মকর সংক্রান্তি বলে কথা। ঠান্ডা না পড়ে যাবে কোথায়।’’

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ শীত হারিয়ে গত এক দশকের মধ্যে উষ্ণতম দিন কাটিয়ে চমকে দিয়েছিল সবাইকে। কপালে ভাঁজ পড়েছিল কৃষক থেকে সাধারণ মানুষ সকলের। দুপুরের রোদে দাঁড়িয়ে বোঝা যাচ্ছিল না মাসটা পৌষ না ফাল্গুন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছিলেন, এসব পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারসাজি। দিন কতকের মধ্যেই আবার ঠান্ডা পড়বে। পূর্বাভাষ মিলিয়ে মঙ্গলবার থেকেই বদল ঘটেছে আবহাওয়ায়। গতিপথ বদলে হাওয়া ফের উত্তরে বইছে। দ্রুত নামছে পারদ। বুধবার তাপমাত্রা ফের ১২ ডিগ্রির আশেপাশে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাষ আরও নামবে পারদ। শীতের এই লুকোচুরি খেলার মধ্যেই দুয়ারে মকর। যদিও অতিমারির এই কালে কোথাও তেমন আগ্রহ নেই মকর পরব ঘিরে। পৌষ সংক্রান্তির দিনে স্থানীয় ভাবে পৌষ আগালানোয় ততটা উৎসাহ নেই যতটা আছে নিয়মরক্ষার তাগিদ। নমো নমো করেই হচ্ছে সবকিছু।

মকর সংক্রান্তির কাকভোরে উঠে বাড়ির সদর দরজার সামনে গোবর দিয়ে পৌষবুড়ি তৈরি করেই ছুট ঘাটে। গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী তখন শীত কুয়াশায় মাখামাখি। কনকনে সেই জলে কোনও রকমে তিন ডুব। হাড়ে কাঁপন ধরানো সেই ভোরে বাড়ি ফিরে পাটভাঙা শাড়িতে পৌষ আগলানো শুরু করতেন। পৌষবুড়ি মানে গোবরের গোলাকার পিণ্ডের উপর ধান দূর্বা ফুল যবের শিস সিঁদুর দিয়ে পুজো করে সকলে মিলে একসঙ্গে প্রার্থনা করতেন, “এসো পৌষ যেও না, জন্ম জন্ম ছেড়ো না”। কোথাও কোথাও সংক্রান্তির সংক্রান্তির আগের সন্ধ্যায় পৌষ আগলানো হত। গ্রামের বউঝি’রা একসঙ্গে জড়ো হয়ে গাইতেন, “পোষ মাস লক্ষী মাস না যাইও ছড়িয়া, ছেলে পিলেকে ভাত দেব খান্দা ভরিয়া।” গোবর নিকানো উঠোনে চালের গুঁড়োর বাহারি নকশা। কোথাও পুরো উঠোন জুড়ে পিটুলির গোলার আলপনা। তুলসী মন্দিরের সামনে আঁকা হয়েছে ‘নেড়া নেড়ি’ ভিন্ন মতে “বুড়ো বুড়ি”। আর সামনে থরে থরে সাজানো নানা রকমের পুলি, পিঠে পাটিসাপটা। আস্কে পিঠে, গোকুল পিঠে, ভাজা পিঠে। চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি, দুধপুলি, আঁদোশা কত কী ।

এছবি এখনও দেখতে পাওয়া যায় বাংলা গ্রামেগঞ্জে। সে কালে অগ্রহায়ণে নতুন ধান উঠলেই প্রস্তুতি শুরু হত পৌষ-পার্বণের। ঢেঁকিতে নতুন চালগুঁড়ো করা মানেই মকর পরব এসে গেল। গ্রামে দু’তিন দিন ধরে উৎসব। উৎসব মানে চাল, দুধ, গুড়, দিয়ে নানারকম পিঠেপুলি তৈরি করা আর সকলে মিলে খাওয়া। এখনও সেই অভ্যাস একেবারে যায়নি মানুষের। বুধবার প্রায় সব বাজারেই বিক্রি হয়েছে পিঠে তৈরির মাটির সরা। পিঠে তৈরির অন্যতম উপকরণ নারকেলের দাম ছিল চড়া। ৩৫ টাকা থেকে শুরু। তারপর সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি ৫০-৫৫ টাকা পর্যন্ত। পাকা কলার জোড়া ৮-১০ টাকা। তবে বহুবিচিত্র নামের এবং স্বাদের পিঠে অবশ্য এখন বেশির বাড়িতে তৈরি হয় না। ভাপা পিঠে, সেদ্ধ পিঠে, পাটিসাপটা, চন্দ্রপুলি, ভাজাপুলি, মালপোয়া বা রসবড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে পৌষপার্বণ। কোথাও ‘আওনি বাওনি’ কোথাও ‘উতরান’ (উত্তরায়ণ) আবার কোথাও নিছক মকর সংক্রান্তি হয়েই ফুরিয়ে যাচ্ছে পৌষ মাস।

alpana Winter

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।