Advertisement
E-Paper

মারণরোগ না কি অপুষ্টি? মুর্শিদাবাদে ২৪ ঘণ্টায় ১১ শিশুমৃত্যুর কারণ খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন

শিশুমৃত্যুর কারণ নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল একে অন্যের দিকে দায় ঠেলেছে। পরিস্থিতি দেখে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:০৫
Share
Save

মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সন্তানহারা হয়েছে জঙ্গিপুরের জাহানারা (নাম পরিবর্তিত)। পুত্রশোকে ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের এক কোণে মাথা নিচু করে বসে। কেউ এক জন নাম ধরে ডাকতে ধীরে ধীরে মুখ তুলল সে। সন্তানহারা এই মায়ের বয়স কত হবে? মেরেকেটে ১৭ বছর। শুধু জাহানারা নয়, গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে যে ১১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে সাত জনের মা নাবালিকা। বস্তুত, শিশুমৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অপরিণত বয়সে মা হওয়াকেই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন।

একের পর এক শিশুমৃত্যুর কারণ নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল একে অন্যের দিকে দায় ঠেলেছে। পরিস্থিতি দেখে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার দফায় দফায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক এবং নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশুমৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। তাতে উঠে আসে একটি তথ্য। দেখা যাচ্ছে, সদ্য সন্তান হারানো মায়েদের ঠিকানা আলাদা হলেও তাদের বেশির ভাগের মধ্যে একটি মিল, অপরিণত বয়সে বিয়ে এবং মা হওয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। বরং চিকিৎসকদের সব চেষ্টা সত্ত্বেও অসুস্থ শিশুগুলোকে বাঁচানো যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত শিশুদের প্রত্যেকে অপুষ্টিতে ভুগছিল। সদ্যোজাতদের গড় ওজন ছিল ৬০০ গ্রামের নীচে। আর তাদের মায়েদের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর। মায়েদের গর্ভস্থ ভ্রূণের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হওয়ার আগেই ‘অকাল’ প্রসবের ফলে নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় ভুগতে শুরু করে শিশুগুলি। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের সে কথাই জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে শিশুদের।’’ আর অপুষ্টির কারণ খুঁজতে গিয়ে গোড়ায় গলদ খুঁজে পেল আনন্দবাজার অনলাইন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরী বৃহস্পতিবার ৪৬০ গ্রাম ওজনের একটি সন্তানের জন্ম দেয়। জঙ্গিপুরের ১৭ বছর ৩ মাস বয়সি এক নাবালিকা যে সন্তান প্রসব করে, তার ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম। শুধু এই দুই মা নয়, ২৪ ঘণ্টায় যে ১১ সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মায়েরা সবাই হয় নাবালিকা নয়তো সবে আঠারো পেরোনো। আসলে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতে না দিতেই মেয়েদের পাত্রস্থ করার ‘চল’ এখনও রয়েছে মুর্শিদাবাদের গ্রামগঞ্জে। বাল্যবিবাহ রুখতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের একাধিক প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের গ্রামে গ্রামে গেলে দেখা যাবে বাল্যবিবাহের ছবি। আর তারই ফলশ্রুতিতে অপুষ্টিজনিত সমস্যা নিয়ে শিশুদের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন অসুখে ভুগতে থাকে তারা। তাই, ১১ শিশুর মৃত্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মনে করছেন জেলার প্রবীণ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রাজ্য পরিবার পরিকল্পনা আধিকারিক চিকিৎসক অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘একটি ৪০০ গ্রাম ওজনের বাচ্চা ছিল। সে পাঁচ মাস মায়ের গর্ভে ছিল। আর এক জন ছিল ৯০০ গ্রামের। চিকিৎসার কোনও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু তাদের বাঁচানো যায়নি।’’ আর একটি তথ্য দিলেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অমিত দাঁ। তিনি বলেন, ‘‘১৬ থেকে ১৭ বছরের মেয়ে মা হচ্ছে। তার ফলে কম ওজনের পাশাপাশি জন্মগত ত্রুটি নিয়ে সন্তানের জন্ম হচ্ছে।’’ কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে ঠেকাতে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে আরও প্রচারের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। চিকিৎসকের সংযোজন, ‘‘আশাকর্মীদেরও আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রশাসনকেও আরও সজাগ হতে হবে।”

গ্রামবাংলার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার কমিশনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য প্রসূন ভৌমিকের দাবি, ‘‘আসলে এখনও বাবা-মায়েরা ছেলেদের প্রতি যতটা যত্নবান হন, কন্যাসন্তানের প্রতি ততটা নন। এই ভয়াবহ সামাজিক অভিশাপেই এক নাবালিকার অল্প বয়সে মা হতে হয়। প্রসবের সময় প্রাণের ঝুঁকি থাকে তাদের দু’জনেরই।’’ তাই মুর্শিদাবাদে শিশুমৃত্যুর প্রাথমিক কারণ অপুষ্টি হলেও, আসল রোগটা যে অনেক গভীরে, সে ব্যাপারে সব বিশেষজ্ঞই মোটামুটি একমত। তার পরেও এত শিশুমৃত্যুর দায় কার, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

Child Death Case Murshidabad Medical College Child death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।