তপন বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
ছোট মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম। আগরতলায়। ওখান থেকে শান্তিপুরের বাড়ি ফেরার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস উঠি। রবিবার সকাল ৮টা ১৫ নাগাদ আগরতলা থেকে ট্রেনে যাত্রা শুরু হয়। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। বি-১ এসি স্লিপার কোচে ছিলাম আমি আর আমার স্ত্রী। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের সিটেই বসেছিলাম। কিছু পরে ঠিক করি, হাত-মুখ ধুয়ে চা খাব।ট্রেন তখন জলপাইগুড়ি পার করে শিলিগুড়ির দিকে ছুটছে। আমাদের নামার কথা শিয়ালদহ স্টেশনে। তখনও বেশ কয়েক ঘণ্টার পথ বাকি। সময় ক’টা হবে... সকাল ন’টা পনেরো মতো।
হাত-মুখ ধোয়ার জন্য সবে সিট ছেড়ে উঠেছি। কিছুটা এগোতেই হঠাৎ বিকট জোরে একটা শব্দ। সঙ্গে প্রবল ঝাঁকুনি। এক মুহূর্ত পর মনে হল, পিছন থেকে কেউ যেন সজোরে ধাক্কা দিল আমায়। ছিটকে পড়ে গেলাম ট্রেনের মেঝেয়। ধাক্কা খেলাম ট্রেনের দেওয়ালে। বাঁ হাতের কব্জিতে, আঙুলে বেশ চোট লাগল। আমার স্ত্রী তখনও সিটেই বসেছিল। ঘটনার সময়ে ও সিট থেকে ছিটকে পড়ে যায়। অন্য যাত্রীরাও তখন এ দিক ও দিক ছিটকে পড়েছেন। তখনও কী হল, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে।
যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক। সবাই আতঙ্কে চিৎকার করছে। হাতে-পায়ে প্রবল যন্ত্রণা, তার মধ্যেও কোনও মতে উঠে দাঁড়ালাম। সবাই বলাবলি করছে— ট্রেন থেকে নেমে পড়ুন, মনে হয় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। সিটের কাছে গিয়ে দেখলাম, আমার স্ত্রী পড়ে গিয়েছে। ওর হাতে-পায়ে আঘাত লেগেছে, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ব্যাগপত্র ছিল। ওই অবস্থাতেও কোনও মতে দু’জনে মিলে ব্যাগ টেনে নিয়ে ট্রেনের দরজার দিকে এগোলাম। নামতে গিয়ে সেটা কোনও স্টেশন নয়। আশপাশে মাঠ। মাঝে রেললাইন। ট্রেনের সিঁড়ি দিয়ে কোনও মতে নামলাম। অন্য যাত্রীরা হাত বাড়িয়ে সাহায্য করলেন। ট্রেন থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে দেখি— ভয়ঙ্কর দৃশ্য! চোখের সামনে দেখছি ট্রেনের কামরাগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। ইঞ্জিনের উপরে উঠে পড়েছে কোনও কামরা।
আশপাশ থেকে স্থানীয় লোকজন তত ক্ষণে ছুটে এসেছেন। বেশি ক্ষণ দুর্ঘটনার জায়গাটায় দাঁড়ানোর আর সাহস পেলাম না। রেললাইন পার করে এগিয়ে গেলাম। কিছুটা দূরে স্থানীয় বিজেপি সাংসদের সহায়তা কেন্দ্র। সেখানে তাঁদের থেকে জল, কিছু শুকনো খাবার পেলাম। ওঁরাই ব্যবস্থা করে দিলেন নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার। গাড়িতে নিউ জলপাইগুড়ি এসে সেখান থেকে টোটোয় পৌঁছালাম শিলিগুড়ি। বিকেলে সেখান থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন। শিলিগুড়ি স্টেশনে বসে এখনও ওই আতঙ্কের দৃশ্য ভুলতে পারছি না। আগরতলায় এর আগেও বহু বার মেয়ের বাড়ি গিয়েছি। ট্রেনে চেপেই। কিন্তু এ রকম অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হয়নি আগে। শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহ পৌঁছে, সেখান থেকে শান্তিপুর যাওয়ার ট্রেন ধরব। এখন অপেক্ষা করছি— কতক্ষণে সুস্থ ভাবে বাড়ি পৌঁছব।
অনুলিখন: সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর থানার মোড়ের বাসিন্দা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy