বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া বিভিন্ন দেশের ছাত্র ছাত্রীরা বাড়ি ফিরে আসছে, গেদে স্টেশনে তোলা ছবি। ছেলেটি নেপালি, নাম প্রাজল। নদিয়ার গেদেতে । ১৯ জুলাই ২০২৪। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
স্টেশনে সিমেন্টের বেঞ্চে পিঠের ব্যাগ নামিয়ে রাখেন বছর উনিশের যুবক। চোখেমুখে ক্লান্তি, আতঙ্ক। নাম জানতে চাইলে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে উত্তর দেন— “সাদিকুল রহমান। বাড়ি অসমের নওগা এলাকায়। আমি বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়ুয়া।”
সাদিকুল বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের একটি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আঁচ তিনি খুব কাছ থেকেই দেখেছেন। দেখেছেন, মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন একাধিক ছাত্র। আহত অনেকে। কলেজ-ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। ক্যাম্পাসের বাইরে বেরনো বন্ধ। খবর জেনে উদ্বিগ্ন পরিবার বারবার তাঁর মতো ভিন্ দেশের পড়ুয়াদের দেশে ফিরতে বলেছে। কলেজের অন্য ভারতীয় ছাত্রেরা বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। সে দলে নাম লেখান সাদিকুলও। রাতের অন্ধকারে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসেন গেদে সীমান্তে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে পা দিয়ে তবে স্বস্তি।
সাদিকুর একা নয়। তাঁর মতো আরও কয়েক জন। ছাত্রীরাও আছেন সে দলে। সকলেরই চোখেমুখে ক্লান্তি আর উৎকণ্ঠা। এ দিন দেখা গেল, দুই ছাত্রীকে কার্যত ঘিরে আছেন জনাকয়েক সহপাঠী। ভরসা জোগানের চেষ্টায় বলছেন, “ভয় কিসের! আমরা তো দেশেই চলে এসেছি।”
পড়াশোনায় ছেদ পড়ার দুশ্চিন্তাও রয়েছে। আর এক জন ছাত্র বলেন, “পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাব। চিন্তা করিস না।”
এরই মধ্যে পাশের এক পড়ুয়া মাকে ফোন করে জানান, নিরাপদে ভারতে চলে এসেছেন। আশ্বস্ত করেন।
তাঁরা জানালেন, বাংলাদেশের ওই কলেজে প্রায় ৮০ জন ভারতী পড়ুয়া পড়েন। তাঁরা সকলেই দেশে ফিরে এসেছেন। এঁদেরই এক জন নেপালের কাঠমান্ডুর বাসিন্দা প্রাজল। করুণ মুখে তিনি বলেন, “ওই দেশে যা অবস্থা, একটা দিনও থাকা নিরাপদ নয়। মা ফোন করে খুব কান্নাকাটি করছে ফেরার জন্য। আটকে পড়ার আগেই তাই আমরা ফিরে এলাম।”
নদিয়ার মায়াপুরের বাসিন্দা নীলাভ সাইদ ওই একই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। তিনি বলেন, “অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে পড়তে গিয়েছিলাম। জানি না, আগামী দিনে সব ঠিকঠাক হবে কিনা। জীবন নিয়ে ফিরলেও কেরিয়ার অনিশ্চিত হয়ে গেল।”
চলে আসছেন বাংলাদেশের মানুষও। রাজশাহী ঘোষপাড়ার বাসিন্দা চার খুড়তুতো-জ্যেঠতুতো ভাই এ দিন গেদে স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন করছিলেন তাঁদের নানিকে। নানির বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। তাঁরা সেখানেই উঠবেন। শুক্রবার খুব ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন চার ভাই। গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের পর হাঁফ ছেড়েছেন। এঁদের এক জন ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র প্রিন্স মহম্মদ। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ছাত্রেরাও আজ বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। তাঁরাও এমন অনৈতিক সংরক্ষণ চাইছে না। ক’জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশি অন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নামছে। পুলিশ যতই দমনপীড়ন চালাবে, ততই আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়বে।” তা হলে দেশ ছাড়লেন কেন? উত্তরে আর এক ভাই মহম্মদ রুবেল হোসেন বলেন, “পুলিশ ধড়পাকড় শুরু করেছে। তা ছাড়া, নানির বাড়িতে বেড়ানোর ইচ্ছে ছিল অনেক দিন ধরেই।”
গেদে স্টেশনের পাশে বৈদেশির মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র চালান প্রৌঢ় দীনবন্ধু মহলদার। তিনি বলেন, “প্রায় চল্লিশ বছর ধরে দেখছি। ৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম এমন পরিস্থিতি দেখলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy