শিক্ষককে ঘিরে পড়ুয়াড়া। শনিবার টুঙ্গি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: সুদেব দাস
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বদলি হয়ে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে। কিন্তু পড়ুয়ারা চায় না প্রিয় স্যরকে অন্যত্র যেতে দিতে। তাই শনিবার শিক্ষককে ঘিরে ধরে আটকে রাখল কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের টুঙ্গি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। অভিভাবকেরাও স্কুলের গেটে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান তোলেন, 'স্যরের স্কুল ছাড়া চলবে না'। পড়ুয়াদের ভালবাসা আর অভিভাবকদের কাছে সম্মান পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানল না বছর পঞ্চান্নের শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ নাথের।
গেদে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। কর্মজীবনের প্রথম দিন থেকেই তিনি টুঙ্গি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন। বর্তমানে জেলা জুড়ে প্রধান শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কাজ চলছে। মাসখানেক আগে সেই আবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই মতো ওই ব্লকের ধরমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। অভিভাবকেরা তা জানতে পেরেই একে একে স্কুলের সামনে জড়ো হন। তাঁদের দাবি, কোনও ভাবেই স্যরের স্কুল ছাড়া চলবে না।
এই দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পড়ুয়ারা স্যরকে ঘিরে রেখেছে। তিনি কিছু বলার চেষ্টা করছেন।কিন্তু কচিকাঁচাদের কিচিরমিচিরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তাঁর স্বর। শুধু শোনা যাচ্ছে ‘যেতে দেব না, যেতে দেব না’ স্লোগান। পড়ুয়াদের চোখেও জল। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেলছেন শিক্ষক। ততক্ষণে বদলি আটকাতে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন অভিভাবকেরাও।
অভিভাবক টুসি ঘোষ বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতো দেখেন স্যর। স্কুলে না এলে বাড়িতে গিয়ে বা ফোন করে খোঁজ নেন। শুধু পড়াশোনা নয়, পুষ্টির দিকেও কড়া নজর তাঁর। আমরা স্যরকে যেতে দেব না।’’ শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কথায়, "আর প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর চাকরি রয়েছে। কিন্তু অভিভাবক ও ছেলেমেয়েদের এই ভালোবাসা আমি আগে বুঝিনি।" চোখের জল মুছে তিনি বলেন, "ওরা বলছে, আমি না থাকলে স্কুলে আসবে না। আমি ওদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। যিনি আমার জায়গায় দায়িত্ব নেবেন, তিনিও ওদের খেয়াল রাখবেন।"
কিন্তু কোনও কিছুতেই এ দিন পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মন গলেনি। অভিভাবকদের দাবি, বদলি যদি আটকানো না যায় তা হলে আগামী দিনে এই স্কুলে তালা ঝুলবে। কেউই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না। নদিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) সুকুমার পসাড়ি বলেন, "আমরা কেউই নিয়মের ঊর্ধ্বে নই। সরকারি নিয়ম ও নির্দেশিকা তো মানতেই হবে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy