স্কুলে এসেছিল সাকুল্যে এই ক’জন পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র
গ্রামে পাঁচ-পাঁচটা বিয়ে। এ পাড়া ও পাড়ার প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রীর কোনও না কোনও বাড়িতে নেমন্তন্ন নেই হতে পারে?
থাক পড়ে মিডডে মিল, সুতির গোঁসাইগ্রাম প্রাথমিক স্কুলে বুধবার তাই হাজিরা ঠেকল সাকুল্যে দশে! পঠন পাঠন শিকেয়, শিক্ষকেরা ভাদ্র গরমে খবরের কাগজের হাওয়া করেও সময় কুলিয়ে উঠতে পরাছেন না। এ ভাবে হয় নাকি? প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তাই বাড়ি ঘুরে পড়ুয়াদের খোঁজে নামলেন শিক্ষকেরা।
তাতে উপস্থিতি কিছু বাড়লেও টিফিনের ঘণ্টা বাজতেই অনেকেই পাঁচিল ডিঙিয়ে পগারপার। মিডডে মিলের মেনুর সেদ্ধ ডিম গড়াগড়ি খেল হাঁড়িতে। ডিমের গন্ধ পেলেই অন্য দিন যে স্কুলে থইথই করে ছেলেমেয়েরা। সেই স্কুল এ দিন খাঁ খাঁ, মাছি উড়ল শূন্য পাতে।
প্রধান শিক্ষক মহম্মদ বদরুজ্জামান বলছেন, “গ্রামে পাঁচটা বিয়ে। বিয়ে, বৌভাত মিলিয়ে গ্রামে যেন উৎসব। প্রায় সবই দুপুরে। তাই স্কুলের হাজিরার এই দুরবস্থা। ২৪২ জন ছাত্রছত্রীর কেউই প্রায় আসেনি। তাই আমরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ফেরাতে চেয়েছিলাম। নাহ, সে গুড়েও বালি!’’
এ দিন স্কুলে আসেনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আলিয়ারা খাতুন। পাশেই মামাতো ভাইয়ের বিয়ে। শিক্ষকেরা বাড়ি ধাওয়া করে স্কুলে তুলে নিয়ে যেতে এসেছেন শুনে বেরিয়ে এল সে। আলিয়ারা বলছে, “দাদার বিয়ে বলে কথা। সবাই আনন্দ করছে। আর আমি যাব স্কুলে।’’ তার না হয় দাদার বিয়ে। কিন্তু আসিয়া খাতুন? বলছে, ‘‘পড়শি দিদির বিয়ে, স্কুলে যাব কী করে! তাও স্যরেরা এসেছিলেন বলে বিয়ে বাড়ি থেকেই এসেছি।’’ এ দিন মাস্টার মশাইয়েরা বাড়ি এসেছেন ছাত্রী খোঁজে, জানতে পেরেই মায়ের পিছনে লুকোয় মেয়ে। তার উত্তরটা দিলেন মা মানেরা, “পড়শির বিয়ে বলে কথা। কী করব বলুন তো!’’
পার্শ্ব শিক্ষিকা সাবিনা খাতুন বলছেন, “শিক্ষা নিয়ে সচেতনতার অভাব তো রয়েইছে। তাই ৫০ শতাংশ ছেলে মেয়েও স্কুলে আসতে চায় না। এমন গ্রাম উজাড় করা বিয়ের দিনে ক’জন আসবে তা নিয়ে সংশয় ছিলই। এ দিন তা ফলে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy