গান গেয়ে মন ভরিয়ে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি করেন নবি। নিজস্ব চিত্র।
কত রত্নই যে লুকনো গ্রাম বাংলার পথে পথে! হজমের গুলি থেকে মাথা ধরার বাম, মাজার ব্যথার মলম থেকে দাঁতের ব্যথার ওষুধ, কেশরত্ন তেল— প্লাস্টিকের ঝু়ড়িতে ভরে গ্রামের পথে পথে ফেরি করে বেড়ান নবি শেখ। না, এতে কোনও বিশেষত্ব নেই। নবি আর পাঁচ জনের চেয়ে আলাদা তাঁর ফেরির করার ধরণে। কখনও কিশোর আবার কখনও কুমার শানু ভর করে তাঁর গলায়। সাত সকাল হোক কিংবা ভরদুপুর— গ্রাম বাংলায় শানু বা কিশোরের খালি গলায় গান শুনে ঘরে থাকতে পারে কে! বাচ্চা থেকে বুড়ো, কিশোরী থেকে ঠাকুমা, সবাই তখন ভিড় করেন নবির পসরার চার পাশে।
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের মহম্মদপুর গ্রামের নবি শেখ। বছর তিরিশের নবির আছে একটি মোটরবাইক। তারই পিছনে বাঁধা একটি প্লাস্টিকের ঝুড়ি। সেই ঝুড়িতে যাবতীয় আয়ুর্বেদিক ওষুধ। কণ্ঠের গানকে পুঁজি করে নিত্য তাই ফেরি করে বেড়ান।
সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানটা গলায় ভাল খেলে, কিন্তু বাড়ির স্বাস্থ্য যে ভাল না। তাই অল্প বয়সেই গানের চর্চা ভুলে লাগতে হয় রাজমিস্ত্রির কাজে। ঢালাই, বালি, পাথর, সিমেন্ট মাখার ফাঁকে ফাঁকেই চলতে থাকে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। তবে সেই কাজ বেশি দিন করেননি। এর পর গ্রামে গ্রামে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির কাজ নেন। তাতেই নবির হাতিয়ার হয় কণ্ঠের গান। এখন খড়গ্রামের যে কোনও গ্রামে আচমকাই কিশোর বা শানুর গান শুনতে পেলে মানুষ বুঝে যান, ওই তো নবি আসছে!
কখনও-সখনও সময়সুযোগ পেলে আশপাশের গ্রামে জলসাতেও গান গেয়ে মানুষের মন ভরান নবি। এই করেই দিন আনি দিন খাই পরিবারের দৈনিক ডাল, ভাতের বন্দোবস্তটুকু হয়ে যায়। তাতেই খুশি নবির মা-বাবা। তাঁরা গর্বিত ছেলের গানের প্রশংসা শুনে। অভাবের কারণে তালিমটুকুও দিতে পারেননি, কিন্তু ছেলে তাঁদের সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে, সেই গানকেই হাতিয়ার করেছে বেঁচে থাকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy