প্রাণতোষ সেন, কেএন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
দুয়ারে পুরভোট। তার আগে রাজ্য বাজেট যে জনমোহিনী হবে সে প্রত্যাশা ছিল। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বাজেট ভাষণে ইঙ্গিত মিলেছে বাংলার পিছিয়ে পড়া গরীব মানুষ ও বেকার যুবক যুবতীদের পাওনা বরাতজোরে হয়তো কিছুটা পূরণ হয়েছে। ২০১৯-২০ বাজেটে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এ বারে ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি ৬৮৭ কোটি টাকা। ফলে আগামী অর্থবর্ষে মূলধন ও রেভিনিউ খাতে ব্যায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিসরটি বেড়েছে। কৃষক বন্ধু, বাংলা ফসল বিমা যোজনা, কন্যাশ্রীর মতো পুরনো প্রকল্পগুলিতে যেমন বেশি বরাদ্দ করা হবে, তেমনই এ বারের বাজেটে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ১১টি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। বেকারদের জন্য কর্মসাথী প্রকল্প, আদিবাসী ও তপশিলী জাতির প্রবীণ লোকজনের জন্য ভাতা প্রকল্প বিশেষ কাজে আসবে।
সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে শ্রমিকরা মাসে ২৫ টাকা ও রাজ্য সরকার মাসে ৩০ টাকা জমা দেয়। এবার থেকে পুরো টাকা রাজ্য সরকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কর্মসাথী প্রকল্পে স্বল্প সুদে বেকার যুবকদের সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দু’লক্ষ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। প্রবীণ আদিবাসী ও তপশিলী জাতিভুক্ত লোকদের মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। প্রতি তিন মাসে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করলে তার খরচ সরকার বহন করবে। অর্থমন্ত্রী যে সব ব্যায় বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়িত হলে মুর্শিদাবাদের অনেক উপকার হবে। এই জেলার একটি বড় অংশ অসংগঠিত শ্রমিক, গরীব হওয়ার কারণে অনেকে বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারেন না। বেকারত্বের জ্বালা রয়েছে।
তবে দারিদ্র ও বেকারত্ব দূরীকরণে ঢালাও অনুদানের বদলে উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিলে, অর্থাৎ রেভিনিউ খাতে বরাদ্দের বদলে মূলধন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করলে তার ইতিবাচক ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সরকারের দেনা ও ঘরোয়া উৎপাদনের অনুপাতটি ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে আমাদের রাজ্যে মোট উৎপাদনের মধ্যে দেনার অনুপাত সহনীয় সীমার উর্ধে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ভাষণে আগামী বছরে রাজ্য সরকারের আয়ের উৎসের চিত্র পুরোপুরি ধরা পড়ল না। তবে অনুমান করা যায় ২০১৯-২০ বাজেটে যখন ৯ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছিল, এবারে বাজেটে ঘাটতির অঙ্ক অনেক বড় হবে। গোটা দেশে জিডিপি যখন তলানির দিকে, বেকারত্ব ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে, তখন জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই বাজেট সমর্থন যোগ্য।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে ঘোষিত বরাদ্দকে স্বাগত জানিয়েও বলা দরকার এগুলির রুপায়ন নির্ভর করে আয়গুলি কতটা বাস্তব চেহারা নেবে তার উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy