রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রানি দফাদার। নিজস্ব চিত্র Sudev Das
শীতের রাত। অসহ্য পেটে যন্ত্রণা নিয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে আসেন তরুণী রানি দফাদার। শল্যবিভাগে ভর্তি রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। পরে চিকিৎসকেরা জানতে পারেন— ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু ডিম্বাশয়ের পরিবর্তে ডিম্বনালিতে গর্ভধারণ করেছেন। রাতেই অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাখা হয় আইসিইউ-এ। পরে হৃদ্রোগেও আক্রান্ত হন তরুণী। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করাটাও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। বাধ্য হয়ে কলকাতা এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে 'টেলি কনসান্ট'-এ ওই তরুণীর পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা চলে। দশ দিন পরে সঙ্কটমুক্ত হয়ে বুধবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন তরুণী।
রানাঘাট-২ ব্লকের গাংনাপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী গত ১১ নভেম্বর রাত প্রায় আটটা নাগাদ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পেটে যন্ত্রণা নিয়ে তিনি জরুরি বিভাগের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। সেখানেই তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়। পরে তরুণীর রক্তাল্পতার বিষয়টি নজরে আসে চিকিৎসকদের। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তবে ডিম্বাশয়ের পরিবর্তে ডিম্বনালিতে গর্ভধারণ হয়েছে তাঁর। চিকিৎসার পরিভাষায় একে 'এক্টোপিক প্রেগনেন্সি' বলে।
ওই রাতেই তরুণীর অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের মহিলা রোগের চিকিৎসক অভিরূপ নস্কর বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করে প্রায় তিন লিটার রক্ত বের করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে মহিলাকে মোট চার ইউনিট প্লাজ়মা ও রক্ত দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে আইসিইউ-এ রাখা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মহিলা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন।’’ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই ধরনের রোগীর প্রাণ বাঁচানো খুব একটা সহজ ছিল না।’’
হাসপাতাল সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, ‘‘ওই অবস্থায় রোগীকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা ঝুঁকিপূর্ণই ছিল। বাধ্য হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাহায্য নিই। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে যেমন পরামর্শ দিয়েছেন, আমরাও সেই ভাবে রোগীকে চিকিৎসা করেছি। প্রতি মুহূর্তে আপডেট জানিয়ে দিয়েছি এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের। তাঁরাও ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি নজরদারি করেন। রোগী এখন বিপদমুক্ত।’’
বুধবার হাসপাতাল থেকে ছুটির সময়ে চিকিৎসকের হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী। তাঁর বাবা বিশ্ববন্ধু বসু বলেন, ‘‘চাষ করে সংসার চলে। মেয়েকে বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। রানাঘাট হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্যই মেয়ের পুনর্জন্ম হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy