পাল চৌধুরী বাড়ির ঠাকুর দালান। রানাঘাটে। ছবি:সুদেব দাস।
কাশফুল আর নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা শুরু হলেই যেন প্রাণ ফিরে পায় জমিদার বাড়ি। যেখানে কান পাতলে শোনা যায় ইতিহাসের ফিসফাস। রানাঘাটের পালচৌধুরী বাড়ির প্রতিটা খিলানের সঙ্গে জড়িয়ে দশদিনের দুর্গাপুজোর ইতিহাস। ছাদ বিহীন একের পর এক খিলান আজও মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে প্রাচীনতাকে। অনেকের মতে, প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন রানাঘাটের পালচৌধুরী বাড়ির স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায় ব্রিটেনের বাকিংহাম প্যালেস ও মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির।
রানাঘাটে একদা নদীপথে চলতো বাণিজ্য। দুই ভাই কৃষ্ণপান্তি পাল এবং শম্ভুপান্তি পাল এখানে জমিদারির পত্তন করেন। ক্রমশ বিস্তার ঘটে বাণিজ্যের। গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক প্রাসাদ, নাটমন্দির। এলাকায় শুরু হয় দুর্গাপুজো। যদিও ঠিক কত বছর আগে এই পুজোর শুরু হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা। তবে শম্ভুপান্তি পালের বর্তমান প্রজন্ম আজও পলেস্তারা খসে পড়া ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে চলেছেন।
পরিবারের দাবি, সে সময় এলাকায় রণা বা রানা ডাকাতের বেশ দাপট ছিল। যদিও ওই ডাকাতের কু-নজর কখনওই পড়েনি পালচৌধুরীদের ব্যবসায়। আবার এই বাড়ির বাণিজ্য ও জমিদারির রমরমা দেখে চৌধুরী উপাধি দিয়েছিলেন ব্রিটিশরা। এছাড়া কৃষ্ণপান্তিকে 'রাজা' উপাধিও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় নদিয়ার রাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তাই রাজা উপাধি নিতে অস্বীকার করেন কৃষ্ণপান্তি। আরও জানা গিয়েছে, একটা সময় ছিল যখন মহালয়ার পর দিন অর্থাৎ প্রতি পদে শুরু হত দেবীর আরাধনা। ১৯৯৩ সাল থেকে অবশ্য সে রীতি বদলে গিয়ে ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয় পুজো। পালচৌধুরী বাড়ির পুজোয় পশুবলি প্রথার প্রচলন কোনওদিনই ছিল না। তবে রীতি মেনে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় এই পুজোয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোও হয়। দশমীর দিন ঠাকুরদালান থেকে প্রতিমাকে যে পথে বের করা হত, আজও সেই পথ ধরে পশ্চিমে কিছুটা এগিয়েই চূর্ণী নদীতে নিরঞ্জনের ব্যবস্থা হয়।
জানা গিয়েছে, এই পুজোকে কেন্দ্র করে এক সময় ঘটা করে গানের আসর বসত পালচৌধুরী বাড়িতে। পরিবারের বর্তমান সদস্য অঞ্জন পালচৌধুরী বলেন, ‘‘পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সারা বছর কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও পুজোর ক'টা দিন সবাই একসঙ্গে মিলিত হই। পূর্বপুরুষদের শুরু করা এই পুজোয় বহু মানুষ এখনও ঠাকুর দালানে ভিড় করেন।"
সারা বছর প্রাচীন এই দালানকোঠায় নিস্তব্ধতা বিরাজ করলেও, ঢাকে কাঠি পড়লেই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটা ইট-কাঠ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy