দিনভর টানাপড়েনের পরে অবশেষে বুধবার বিকালে খোলা হল মৌলনা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্য়াকাউট) হরিণঘাটা ক্যাম্পাসের মূল ফটকের তালা। তবে বুধবারও স্থগিত রইল সমস্ত বর্ষের পরীক্ষা।
এ দিন সকাল থেকেই মূল ক্যাম্পাসের ফটকে তালা ঝুলিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পড়ুয়াদের একাংশ। সোমবার এম টেক প্রথম বর্ষের ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবারও যে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাবে তা পরীক্ষার্থীরা অনেকেই আন্দাজ করতে পারেননি।
ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ এবং উপাচার্যের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দিনই তৃণমূলপন্থী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগামী সোমবার থেকে বাকি পরীক্ষাগুলি যেমন ভাবে ঠিক ছিল, তেমন ভাবেই চলবে। উচ্চস্তরে বৈঠক করে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলির তারিখ ঠিক করা হবে।”
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ম্যাকাউট ক্যাম্পাসেই প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়নী সেনকে (২৪) রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরীক্ষায় মনকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে তিনি চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। সেই সময় ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও চালক না থাকায় সময় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি এবং বাঁচানো যায়নি অভিযোগ করে দফায়-দফায় ছাত্রবিক্ষোভেঅচলাবস্থা তৈরি হয়। মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের একাংশ মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা ঢুকতে পারেননি। ওই দিনই বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেন কর্তৃপক্ষ। তার পরেও বুধবার ফের শিক্ষক, কর্মী ও পরীক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
এ দিন ম্যাকাউটে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে তালা ঝুলছে। ভিতরের দিকে রয়েছেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের একটা অংশ। বাইরে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। উপাচার্য বার বার বিক্ষোভকারীদের তালা খুলতে বলেন। দুই পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক হতে থাকে। হই-হট্টগোলের মধ্যেই কেউ মূল ফটকের পাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর ঘরের কাচের দরজা ভেঙে দেয়। সে সময় ঘটনাস্থলে পুলিশও হাজির ছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা একা উপাচার্যকে ঢুকতে দেবেন বলে জানান। উপাচার্য পাল্টা জানান, সমস্ত শিক্ষক-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই তিনি ক্যাম্পাসে ঢুকবেন।
শেষে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ পিছু হটেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। কিন্তু ইতিমধ্যে ফটকে লাগানো তালার চাবি গোলমালের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারাই তালা ভাঙার চেষ্টা শুরু করেন। তাতে হাত লাগায় পুলিশ। শেষমেষ বিকাল প্রায় ৪টে নাগাদ ভিতরে প্রবেশ করেন উপাচার্য ও অন্যান্যেরা। এর পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে মৃত ছাত্রীর স্মৃতিতে একটি শোকসভা করা হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)