রিম্পা হালদার। নদিয়ার হাঁসপুকুরিয়ায়। ছবি: সাগর হালদার।
সামান্য দিনমজুর পরিবারের মেয়ে। অভাবের সংসার। গ্রামেই ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু করেন প্রথমে। সেখান থেকেই নানা জায়গায় খেলার সুযোগ পাওয়া। বেশ কিছুদিন খেলার পর এ বার সুযোগ মিলেছে ভারতীয় সিনিয়র মহিলা ফুটবল দলে। গ্রামের মেয়ে রিম্পা হালদারের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম। রিম্পার খেলার ভক্ত গোটা গ্রাম। আর সেই মেয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত। পর্তুগালের সিআর-সেভেনের মতোই গোলমেশিন হতে চান তিনি।
রিম্পার বাড়ি পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে। হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া রিম্পা ছোট থেকে ফুটবলে আসক্ত। স্কুলে ক্লাসঘরের চেয়ে মাঠেই বেশির ভাগ সময় দেখা যেত তাঁকে। ফুটবল পায়ে ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে দাপিয়ে বেড়াতেন। তাঁর পায়ের দক্ষতা দেখে অবাক হয়েছিলেন হাঁসপুকুরিয়া স্পোর্টিং ইউনিয়নের সদস্যেরা। সেই ক্লাবেরই অভীক বিশ্বাস রিম্পাকে আলাদা করে তালিম দিতে থাকেন। তা দেখে গ্রামের অন্য মেয়েদেরও ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁক বাড়ে। ওই ক্লাবের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয় মেয়েদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্প।
সেখান থেকেই উত্থান ফুটবল খেলোয়ার রিম্পার। এলাকার বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্প নিয়ে আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় মাঠে নামতে থাকেন। দর্শকদের নজর কাড়েন। এর মধ্যেই কলকাতায় শুরু হয় কন্যাশ্রী কাপ। সেখানে খেলার জন্য রিম্পার সঙ্গে চুক্তি করে সরোজিনী নাইডু ক্লাব। সেই টুর্নামেন্টে ১৫টি গোল দিয়ে বাংলা নির্বাচক মণ্ডলীর নজর কাড়ে রিম্পা। রাজ্যের অনূর্ধ্ব ১৭ দলে খেলার সুযোগ হয়। সেই দলের অধিনায়কত্ব করেন রিম্পা। এর কিছু দিন পর অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা মহিলা ফুটবল দলে সুযোগ পান। এ ছাড়াও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কন্যাশ্রী কাপ, আইএফএ শিল্ড প্রতিযোগিতা মতো জায়গায় নিখুঁত প্রদর্শন করেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, ন্যাশনাল গেমস ২০২৩, খেলো ইন্ডিয়া-র মতো বড় মাপের ফুটবল প্রতিযোগিতাতেও খেলেছেন। কিছু দিন আগেও ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই রিম্পাকে শনিবার সরাসরি ভারতীয় সিনিয়র মহিলা ফুটবল দলে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় মহিলা দলের সতীর্থদের সঙ্গে মায়ানমারের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন রিম্পা। সেখানে আগামী ৯ ও ১২ জুলাই আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে ভারতীয় সিনিয়র মহিলা ফুটবল দল। রবিবার রিম্পাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। হাঁসপুকুরিয়া স্পোটিং ইউনিয়নের সদস্য তথা যাঁর হাত ধরেই রিম্পার ফুটবলে উত্থান, সেই অভীক বিশ্বাস বলছেন, “শনিবার টিম ঘোষণা হয়। রিম্পা সুযোগ পেয়েছেন। ওঁর দুই পায়েই ভাল কাজ রয়েছে। একাধিক দলে খেলেছেন, অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের সুযোগ পাবে, এই আশা বরাবরই ছিল। এখন সেটাও পূর্ণ হওয়ায় আমিও ভীষণ খুশি।”
আর রিম্পার বাবা শ্রীবাস হালদার বলছেন, “ফুটবলের প্রতি ওর ছোট থেকেই ভালবাসা ছিল। আমরা কখনও ওকে আটকাইনি। আজ দেশের হয়ে খেলবে আমার মেয়ে, ভাল লাগছে। প্রতিটা ম্যাচে মেয়ে ভালখেলুক, এটাই চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy