Advertisement
E-Paper

School: স্কুলের সমীক্ষায় প্রকাশিত হল স্কুলছুটের সত্য

শিক্ষকদের অভিমত, টানা দু’বছর স্কুলে না আসার কারণে স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে পড়ুয়াদের। তৈরি হয়নি  বন্ধুবান্ধবের প্রতি আকর্ষণ।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪২
Share
Save

উসিদপুরের ইরাজুল শেখ পেশায় দর্জি। দেপাড়ার সাহিদ শেখের কাজ বোতল কুড়ানো। দেপাড়ার আনারুল শেখ, পেশায় বরফ কলের শ্রমিক। হিসেব মতো ওদের তিন জনেরই এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার কথা। অন্তত নদিয়ার দেপাড়া বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের খাতাপত্র তাই বলেছে। অতিমারির পর্ব পেরিয়ে স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে প্রায় দু’ মাস হতে চলল। কিন্তু ওরা স্কুলমুখো হচ্ছে না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওরা আর স্কুলে আসবে না।

শুধু ওরা তিন জন নয়, করোনা-পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ এলাকায় পড়া ছেড়ে অর্থনৈতিক কারণে কাজে যোগ দেওয়া ছাত্র আর বিয়ে হয়ে যাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা প্রচুর। বিষয়টি নিয়ে একটু অন্য রকম ভেবেছিলেন দেপাড়া বিষ্ণুপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকারি পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা না-করে নিজেরাই শুরু করেছিলেন স্কুলের তরফে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা। ফর্ম ছাপিয়ে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ক্ষেত্রসমীক্ষা করছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাতেই উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য বলেন, “মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন শেষ করতে হবে। কিন্তু কাদের পরীক্ষা নেব? পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির অন্তত চল্লিশ জন পড়ুয়া ভর্তি হওয়ার পর এক দিনও স্কুলে আসেনি। অনুপস্থিতির বহর দেখে আমাদের মনে হয়েছিল, ঠিক কী ঘটছে সেটা জানার জন্য একটা বিস্তারিত সমীক্ষা জরুরি।” এর পরই ছাপানো হয় পড়ুয়াদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সমীক্ষা পত্র। সেগুলি নিয়ে শ্রেণি শিক্ষকেরা ছ’ সপ্তাহ ধরে পড়ুয়াদের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে যে সব তথ্য জানতে পারেন সেখানে তাদের অনুপস্থিতির কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সমীক্ষা শেষে স্কুলের শিক্ষক প্রলয় সরকার, আদর্শ আচার্য বা তৃপ্তি মজুমদারেরা জানান, প্রথমত, করোনার প্রভাবে কর্মহীনতা এবং দ্রব্যমূল্যের ক্রমবৃদ্ধি প্রান্তিক মানুষের উপর যে আর্থিক চাপ তৈরি করেছে তার কারণে অনেক পড়ুয়া শিক্ষার আঙিনা থেকে ছিটকে যেতে বাধ্য হয়েছে। যেমন, অষ্টম শ্রেণির মাসুম ও সাবির শেখ। দুজনেই উশিদপুর গ্ৰামের বাসিন্দা। দু’জনেই মুদিখানার দোকানে কাজে ঢুকে পড়েছে। আবার নিজামপুর গ্ৰামের মজিবুর জল বিক্রি করছে। কাজের খোঁজে দিল্লি পাড়ি দিয়েছে সপ্তম শ্রেণির আবুবক্কর শেখ।

শিক্ষকদের অভিমত, টানা দু’বছর স্কুলে না আসার কারণে স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে পড়ুয়াদের। তৈরি হয়নি বন্ধুবান্ধবের প্রতি আকর্ষণ। উল্টে নিচুক্লাসের অনেক পড়ুয়ার স্কুলে আসতে আর ভালই লাগে না। খেলা, উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরিতেই দিন কাটে। এ বিষয়ে বাড়িরও প্রশ্রয় রয়েছে। এদের অনেককে ফিরিয়ে আনতে পারলেও ষষ্ঠশ্রেণির ইরাজুল, আনারুল বা সাহিদরা পরিবারের পাশে দাঁড়াতে শিশু শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। কাটিয়ে ফেলেছে স্কুলের খাতার নাম।

শিক্ষকদের ওই সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, স্কুলের অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির ১৫ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে এই সময়কালে। অজিত ভট্টাচার্য বলেন “চুপিসারে এদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের বিয়ে নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যা বলেছেন অভিভাবকেরা। এই প্রবণতা মারাত্নক।”

এরপর স্কুল তার নিজস্ব কন্যাশ্রী ক্লাবকে সক্রিয় করার পাশাপাশি শিশুকল্যাণ দফতর, আশাকর্মী এবং বিভিন্ন গ্ৰামের পঞ্চায়েত সদস্যদের সহযোগিতা চেয়েছে। নদিয়ার ডিআই দিব্যেন্দু পাল অবশ্য বলেন,“এই ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই।”

School Leaving Students COVID-19 Pandemic

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।