Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
টোটো-লরি ধাক্কায় মৃত ৩
Toto Accident at Jangipur

জাতীয় সড়কে ফের দুর্ঘটনা, উঠছে প্রশ্ন

নিষিদ্ধ করলেও তার বিকল্প পথ কী, তা আজও নির্দিষ্ট করা যায়নি। শুক্রবারের দুর্ঘটনায় পুলিশের আঙুল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দিকে।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত টোটো। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

দুর্ঘটনাগ্রস্ত টোটো। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৮
Share: Save:

মাল বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রিবাহী টোটোর মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হল টোটো চালক সহ তিন জনের। শুক্রবার সকালে রঘুনাথগঞ্জ থানার মঙ্গলজনে ১২ নম্বর (পুরনো ৩৪ নম্বর) জাতীয় সড়কে এই দুর্ঘটনায় মৃতদের দু’জন স্বামী স্ত্রী। স্বামী চণ্ডী সরকার (৭২) এবং তাঁর স্ত্রী পুষ্প সরকারের (৬২) মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলেই। টোটো চালক নীলচাঁদ হালদারকে (৪৬) আশঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির কিছু ক্ষণ পরেই বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। টোটোতে তিন জনই ছিলেন। তিন জনেরই বাড়ি সুতি ১ ব্লকের বংশবাটী পঞ্চায়েতের আলোয়ানি গ্রামে।

তার পরে প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? টোটো চালক, পুলিশ না জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ?

জাতীয় সড়কে টোটো, অটোর চলাচল বহু দিন আগেই নিষিদ্ধ করেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে জাতীয় সড়কে টোটো চলাচলে নিষেধবিধিও জারি করেছে পুলিশ। কিন্তু নিষিদ্ধ করলেও তার বিকল্প পথ কী, তা আজও নির্দিষ্ট করা যায়নি। শুক্রবারের দুর্ঘটনায় পুলিশের আঙুল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দিকে। যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করেছেন, জাতীয় সড়ক তৈরির নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনেই তৈরি করা হয়েছে ১২ নম্বর চার লেনের জাতীয় সড়ক।

টোটো হোক কী অটো, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ফরাক্কা থেকে সাগরদিঘি ৫টি থানা এলাকায় যোগাযোগের প্রধান পথ ১২ নম্বর জাতীয় সড়কই। কয়েকশো গ্রামীণ সড়ক গ্রাম ছেড়ে এসে মিশেছে বাঁ ও ডান দিকে এই জাতীয় সড়কে। শুক্রবার যে টোটোটি দুর্ঘটনায় পড়েছে সেটিও নাজিরপুর-বংশবাটী গ্রামীণ সড়ক পথ পেরিয়ে জাতীয় সড়কে ওঠে। সড়কের সেই দুই লেন উত্তরবঙ্গগামী। টোটোটির যাত্রাপথ ছিল দক্ষিণমুখী অর্থাৎ উল্টো দিকে। কিন্তু ওই গ্রামীণ সড়ক পথের প্রায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ফাঁক পথ নেই যেখান দিয়ে টোটোটি রাস্তা পেরিয়ে নিজের লেন ধরতে পারে। এর ফলেই লেন ভেঙে চলতে গিয়ে মুখোমুখি ধাক্কার মুখে পড়েছে।

একই অবস্থা অজগরপাড়া থেকে চাঁদের মোড় প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের। অন্তত ২০টি গ্রামীণ পথ এসে মিশেছে জাতীয় সড়কের দুই পাশে। অথচ এক লেন থেকে অন্য লেনে যাওয়ার ফাঁক নেই একটিও। এর ফলে বাইক, টোটো, অটো বহু ক্ষেত্রেই লেন ভেঙে চলছে।

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্রাফিক সুকান্ত হাজরা বলেন, “আমরা এই ফাঁক বা ডাইভার্সন বা লেন বদলের পথ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। তাঁদের সঙ্গে পথ নিরাপত্তা বিষয়ে জেলা পর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে। আমরা বলেছি যে সব গ্রামীণ পথ জাতীয় সড়কে উঠেছে সেই সব এলাকায় চার লেনের মাঝে ডাইভার্সন রাখতে হবে। বহু জায়গায় এলাকার মানুষ নিজেরাই পথ কেটে রাস্তা গড়ে নিয়েছেন।সেগুলিকে বৈধতা দিয়ে ঠিক মতো রাস্তা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

যদিও প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় সড়কে এত ঘনঘন ডাইভার্সন তৈরি হলে, গাড়ির গতি কমবে। কেননা এ সব ক্ষেত্রে সিগন্যালের দাবিও রয়েছে। তাই এত মোড় তৈরি হলে গাড়ির গতি কমতে বাধ্য।

তবে সুকান্তবাবু জানান, টোটো চলাচল এমনিতেই নিষিদ্ধ। কিন্তু স্থানীয় এলাকায় যাতায়াতের বিকল্প কই? ফলে টোটো চলতে দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে জাতীয় সড়কের সঙ্গে আবার কথা বলব, যাতে চার লেনের জাতীয় সড়কের মধ্যে আরও বেশি লেন বদলের পথ তৈরি করা যায়। তাতে লেন ভাঙার প্রবণতা কমবে, দুর্ঘটনাও কমানো যাবে।’’

একই গ্রামের তিন জনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাম জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। টোটোচালক নীলচাঁদের সম্বল বলতে ছিল টোটোটিই। বাড়িতে দুই নাবালক মেয়ে ষষ্ঠ ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Raghunathganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE