স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাস্থলে তদন্তে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের রাতে আগুনে পুড়ে ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ধৃত ‘প্রেমিক’-এর এক বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে যুবকটি যে ‘বান্ধবী’র সঙ্গে রানাঘাটে ঘুরতে যাওয়ায় ছাত্রীটি প্রবল কান্নাকাটি করেছিলেন, ইনি তিনি নন। সিসি ক্যামেরা মারফত যে সূত্র পাওয়া গিয়েছে তার ‘টাইমলাইন’ মেলানোর কাজও শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। তবে ওই রাতে যে তরুণ-তরুণীকে ছাত্রীর পিছু ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল, পুলিশ তাদের পরিচয় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেনি। পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক ওই বাইকটি চালাচ্ছিল না। কেরোসিনের বোতলে পাওয়া আঙুলের ছাপের সঙ্গে মেলানোর জন্য তার আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়নি। আজ, বুধবার ধৃত যুবককে পুলিশ হেফাজত থেকে ফের কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করা হবে।
সোমবারের পর মঙ্গলবারও ফরেন্সিক বিভাগের তিন রসায়নবিদ ফের কৃষ্ণনগরে জেলা স্টেডিয়াম লাগোয়া গলিতে ঘটনাস্থলে যান। লক্ষ্মীপুজোর সকালে সেখানেই একটি ফাঁকা পুজোমণ্ডপে ছাত্রীর পোড়া দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। এ দিন রসায়নবিদেরা সেই মণ্ডপের কাপড় খুলে নিয়ে গিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা ধুলোও সংগ্রহ করেছেন। নারী নির্যাতন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদে অর্জুন সেনা নামে একটি ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন এ দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কৃষ্ণনগর বন্ধের ডাক দিয়েছিল। তাতে কোনও প্রভাব পড়েনি। কৃষ্ণনগর স্টেশনে সামান্য সময়ের জন্য রেল অবরোধ, তার পরে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের সামনেও কিছুক্ষণ পথ অবরোধও করে তারা।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার রাতে ধৃত যুবক এবং মৃত ছাত্রীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন কাছাকাছিই ছিল। দু’জনের মধ্যে ওই রাতে কথাও হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ছাত্রীকে একাধিক বার ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। আপাতত এই সূত্রগুলি জুড়ে পূর্ণাঙ্গ ছবি পেতে চাইছে পুলিশ। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন এবং কল লগ পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সে দিন রাত ১০টা ১২ নাগাদ দু’জনের মধ্যে কথা হয়। এর পর ১০টা ২৫ নাগাদ ছাত্রীটি হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে লেখেন, “আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী’ ইত্যাদি। রাত ১০টা ৪০ নাগাদ ছাত্রীটিকে ঘটনাস্থলের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সেই সময়েই তার পিছনে বাইকে এক জোড়া তরুণ-তরুণীকে যেতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রের দাবি, কিছুক্ষণ পরেই তারা ফিরে আসে। এত কম সময়ে তাদের পক্ষে বড় কিছু ঘটানো সম্ভব কি না তা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ রয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টের মধ্যে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। দু’জনের বেশ কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকেও বার কয়েক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার তদন্তকারীরা যে তরুণীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তিনি ধৃত যুবকের এক বন্ধুর সঙ্গে ওই রাতে ফোনে কথা বলেছিলেন। সেই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতেই ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ ওই রাতে কলেজ মাঠে (ঘটনাস্থলের খুব কাছেই) গিয়েছিল বলে পুলিশের জেরায় জানিয়েছে। তার সেই বন্ধু এবং এই তরুণীর মধ্যে ফোনে কী কথা হয়েছিল, ধৃত যুবকটির সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি কতটা জানতেন, সেগুলোই আপাতত জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ময়নাতদন্তের সময় পাওয়া মৃত ছাত্রীর আঙুলের ছাপ ইতিমধ্যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিন তেলের যে প্লাস্টিক বোতল উদ্ধার হয়েছে, তার গায়ে মেলা আঙুলের ছাপের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। ধৃত যুবকের আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy