—প্রতীকী চিত্র।
মৃত্যুর আগে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীটিকে শেষ দেখা গিয়েছিল নদিয়া জেলাশাসকের অফিসের কাছে মোড়ের মাথায় থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।
তখন রাত প্রায় ১০টা ৪০। সেই মোড়ের এক পাশে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের মাঠ। সেই মাঠের দিকে না গিয়ে রাস্তা পেরিয়ে তরুণী একটি ছোট রাস্তায় চলে যান, যেখান থেকে জেলা স্টেডিয়ামের পাঁচিল লাগোয়া গলিতে ঢোকা যায় (ওই গলিতেই পরের দিন সকালে আধপোড়া মৃতদেহ মেলে)।
ছাত্রীটি যখন মোড়ের মাথায় আসছেন, একটি মোটরবাইক তাঁকে পেরিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে কলেজ মাঠের দিকে দাঁড়িয়েছিল। তিনি রাস্তা পেরিয়ে চলে যেতে সেটিও মুখ ঘুরিয়ে তাঁর পিছু নেয়। বাইকটি চালাচ্ছিল এক যুবক, পিছনে ছিল এক তরুণী। খানিক বাদে তাদের আবার ফিরে আসতেও দেখা যায়। কিন্তু তরুণীকে আর ফিরতে দেখা যায়নি। ওই বাইকের আরোহী এই মামলায় ধৃত যুবক ও তার কোনও বান্ধবী কি না, তা রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
১৬ অক্টোবর সকালে একটি ফাঁকা পুজোমণ্ডপে ছাত্রীটির দগ্ধ দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তার আগের রাতে তিনি বার বার ‘প্রেমিক’-এর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নতুন বান্ধবী জোটায় ছেলেটি তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছিল, দাবি পুলিশ সূত্রের। রাত সওয়া ১০টায় যুবকটিকে ফোন করে ছাত্রীটি কান্নাকাটি করেন। এর মিনিট দশেক পরে হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি নিজেই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী...’। মৃতার মা গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ করায় পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। রবিবার রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য দেবযানী চক্রবর্তী স্থানীয় থানা, মৃত ছাত্রীর বাড়ি, মামার বাড়ি এবং ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনই ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে এসেছে। তাতে আগুনে মেয়েটির ৯০ শতাংশ পোড়ার কথা থাকলেও ধর্ষণের কথা বলা নেই। দেহে কেরোসিন তেলের গন্ধের কথা জানানো হয়েছে। হত্যা না আত্মহত্যা, ঠিক কখন ঘটেছিল, তার অবশ্য উল্লেখ নেই। প্রয়োজনে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নিয়ম মাফিক মৃতার দশ আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে প্লাস্টিক বোতল উদ্ধার হয়েছে, যাতে নীল কেরোসিনের তলানি ছিল। মিলিয়ে দেখার জন্য ধৃত যুবকের আঙুলের ছাপ নিতে কোর্টে আর্জি জানাবে পুলিশ।
১৫ অক্টোবর রাতে ওই ছাত্রী ও যুবকের গতিবিধি জানতে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ও এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ছাত্রীটিকে প্রথম সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় রাত সওয়া ৯টা নাগাদ। এক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে মোটরবাইকে এসে তিনি কলেজ মাঠের সামনে নামেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই তরুণ-তরুণী তাঁর পূর্ব পরিচিত নন। রাস্তায় তাঁদের কাছে ‘লিফট’ চেয়েছিলেন ছাত্রীটি।
এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে, রাত পৌনে ১০টা নাগাদ ছাত্রীটিকে ওই গলি থেকে বেরিয়ে কংক্রিটের রাস্তা পেরিয়ে পুলিশ সুপারের অফিসের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। ১০টা ৪০ নাগাদ সেই রাস্তা দিয়েই তিনি ফিরে আসেন। সঙ্গে আসে ওই মোটরবাইক। মাঝের প্রায় এক ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন, পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। ধৃত যুবক দাবি করেছিল, ওই রাতে সে ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলেজ মাঠে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে যায়। ১১টা নাগাদ ফেরে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে পুলিশ জেনেছে, যুবক রাত সওয়া ১১টা নাগাদ বাড়ি ফেরে। রাত ১২টার পরে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কারও সঙ্গে কথা বলে। কার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, তা জানতে কল রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy