মেয়েকে বিয়ে করতে চাপ দিচ্ছিল বাবা-মা। কিন্তু এখনই বিয়ে করতে চায়নি এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েটি। কিন্তু নাছোড় বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের মাসির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে। মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ করে বাবা-মা। পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরী মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা। আগামী ৩ মার্চ শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে তার বয়স ১৭ বছর ৯ মাস। যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ের জন্য বাবা-মা চাপ দিচ্ছিল সেই ছেলের বয়স প্রায় ৪০। পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যেই বিয়ের জন্য বাবা-মায়ের লাগাতার চাপ সহ্য করতে না পেরে দিন কুড়ি আগে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে ওই কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে নদিয়ার করিমপুরে মুরুটিয়া থানা এলাকায় মাসির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিশোরীর মেসোমশাই দাবি করেন, ‘‘বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়েটিকে বাড়ি থেকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তা ছাড়া ওর বিয়ের বয়স এখনও হয়নি। এ বার ওর উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ও বারবার আমাদের কাছে ওকে বাবা-মার কাছে ফেরত পাঠাতে বারণ করেছিল। কারণ পাঠিয়ে দিলে জোর করে ওই ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে দিয়ে দিবে বাবা-মা। এমনকী আপত্তি করলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটার আশঙ্কাও করছিল ও। তাই ওকে আশ্বস্ত করে আমাদের বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলাম।’’
কিশোরীর মায়ের দাবি, ‘‘আমার মেয়ে আমারই দিদির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে জানার পর মেয়েকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে ওদের অনুরোধ করি। এমনকি আমি গিয়েও মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তাই হরিহরপাড়া থানায় নাবালিকাকে অপহরণের অভিযোগ জানাই।’’ অভিযোগ পেয়ে হরিহরপাড়া ও মুরুটিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে মেয়েটিকে তার মেসোমশাইয়ের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে বহরমপুর হোমে থাকার ব্যবস্থা করে।’’
কিন্তু নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ জেনেও কেন সেই কাজ করছিলেন জানতে চাওয়া হলে কিশোরীর মায়ের স্বীকারোক্তি, ‘‘মেয়ে বড় হচ্ছে। বিয়ের ব্যবস্থা তো করতেই হবে। তাই পাত্র দেখেছিলাম। এখন মেয়ে যখন আপত্তি করছে এবং বিয়ের বয়সও হয়নি, তখন আপাতত আমরা আর এগোতে চাই না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)