ফাইল চিত্র।
লাইনটা ষেন কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে চাইছে না। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন সাধন বিশ্বাস। মাঝবয়সী মানুষটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। এসেছেন হাঁসখালির দলুইগ্রাম থেকে। গত মঙ্গলবার গিয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালির ব্যাঙ্কে। কিন্তু সেখানে আধার কার্ড সংশোধনের ফর্ম পাননি। বুধবার গিয়েছিলেন ধানতলার আড়ংঘাটার ব্যাঙ্কে। সেখানেও একই অবস্থা।
বৃহস্পতিবার তাই অগত্যা সকালবেলা ছুটে এসেছেন কৃষ্ণনগরের হেড পোস্ট অফিসে। সেখানে অজগরের দেহের মতো দীর্ঘ লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে গজগজ করছিলেন—‘‘সব কাজ ফেলে এখন ব্যাঙ্কে-ব্যাঙ্কে ছুটতে হচ্ছে আর নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এমন দিন আসবে কখনও ভাবিনি।”
শুধু সাধনবাবু নন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ক্রমাগত বাড়তে থাকা আতঙ্কের মধ্যে গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার মানুষ আধার কার্ড তৈরি বা সংশোধনের জন্য লাইন দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসের সামনে। তাঁদের মধ্যে সিংহ ভাগ ফিরে যাচ্ছেন শুধু মাত্র ফর্ম হাতে নিয়ে। ‘ডেট’ দেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দু’ মাস পরে।
ক’দিন আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। কৃষ্ণনগর হেড পোস্ট অফিসে দিনে মেরেকেটে ১৫ থেকে ২০ জন আসতেন আধার কার্ড করাতে বা কার্ডের বা ভুল সংশোধন করাতে। গত দিন পনেরো ধরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে। এক-এক দিনে দেড়-দু’ হাজার মানুষ ভিড় করছেন। পোস্ট অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, দিনে ৩০জনের বেশি মানুষকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তাতে কাজে অনিবার্য ভাবে ভুল হবে। কৃষ্ণনগর হেড পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার প্রতিমা অধিকারীর কথায়, “ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশিকা অনুযায়ী, এক দিনে ১৬টি কার্ড সংশোধন ও ৫টি নতুন কার্ড বানানো যেতে পারে। এনআরসি-র কারণে সেটা বাড়িয়ে ৩০ করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “ভুল এড়াতে এর থেকে বেশি করা সম্ভব নয়।” তাই লাইনে দাঁড়ানো শ’য়ে-শ’য়ে মানুষদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফর্ম। অনেকটা টোকেনের মত। সেই ফর্মে লিখে দেওয়া হচ্ছে কোন দিন তাঁর আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হবে। বলা হচ্ছে ‘‘অন্য দিন আসুন।’’
সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, কেন কাউন্টার বাড়ানো হচ্ছে না? ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের কর্তারা এক যোগে জানিয়ে দিচ্ছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে কোন কর্মীকে দিয়ে করানো সম্ভব না। এই কাজ করার জন্য ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ দফতরে অন লাইনে পরীক্ষা দিতে হয়। যাঁরা পাশ করেন তাঁদের সংশাপত্র, বিশেষ আইডি ও পাসওয়ার্ড করে দেওয়া হয়। সেটি কেবল তিনি-ই ব্যবহার করতে পারেন। যত ক্ষণ এই ধরনের কর্মীর সংখ্যা বাড়বে না তত ক্ষণ কাউন্টার বাড়ানো যাবে না।
ডাক বিভাগের নদিয়া উত্তর ডিভিশনের এক কর্তা বলছেন, “প্রায় বছরখানেক আগে এই কাজের জন্য নতুন কিছু যন্ত্র এসেছিল। তার অনেকগুলিতে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও কিছু ক্ষেত্রে কাউন্টার বাড়ানো যাচ্ছে না।” নদিয়া জেলার লিড ম্যানেজার বিমল ভট্টাচার্যের কথায়, “প্রতিটি ব্যাঙ্কেই কোন কোন ব্রাঞ্চ আধার কার্ডের কাউন্টার করবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া। ফলে অন্য জায়গায় কাউন্টার হবে না।” পরিস্থিতি বিচার করে ১ অক্টোবর থেকে কৃষ্ণনগর শহরের কোর্ট পোস্ট অফিস থেকে আধার কার্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এত দিন নদিয়া উত্তর ডিভিশনে শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর ও নবদ্বীপ হেড পোস্ট অফিসেই এই কাজ হচ্ছিল। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “মানুষ যাতে অযথা আতঙ্কিত না হন তার জন্য ব্লকে-ব্লকে প্রচার করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy