(বাঁ দিকে) আরজি করে মৃত নদিয়ার যুবক নন্দ বিশ্বাস। তাঁর বাবা জ্যোতিষ বিশ্বাস (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
চোখের সামনে ছেলেকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখলেন, কিছু করতে পারলেন না। বাবার অভিযোগ, ছেলের অবস্থা সঙ্কটজনক শুনেও ডাক্তার বা নার্স কেউ আসেননি চিকিৎসা করতে। মৃত্যুর আগে ন্যূনতম চিকিৎসাও পাননি যুবক। অন্ত্যেষ্টি সেরে এসে তাই ছেলের মৃত্যুর বিচার চাইছেন নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা জ্যোতিষ বিশ্বাস। তাঁর ২৪ বছর বয়সি পুত্র জ্বর নিয়ে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
মৃত যুবকের নাম নন্দ বিশ্বাস। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন যুবক। গত সোমবার চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি করানো হয় আরজি কর হাসপাতালে। ভর্তির পর তিনি চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বাবা। কিন্তু অভিযোগ, মঙ্গলবার থেকে কার্যত বিনা চিকিৎসায় যুবককে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনও নার্স বা ডাক্তার আসেননি। দেওয়া হয়নি ন্যূনতম স্যালাইনও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যুবকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ওই দিনই মৃত্যু হয় তাঁর।
নদিয়ার রানাঘাটের বেলেহাটি পাড়ার বাসিন্দা নন্দ। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘আমার ছেলের প্রেসক্রিপশনে স্যালাইন দেওয়ার কথা লেখা ছিল। প্রথমে দু’বার স্যালাইন দেওয়াও হয়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আর কোনও স্যালাইন দেওয়া হয়নি। নার্স বা ডাক্তারও কেউ আসেননি। আমরা বার বার খোঁজ নিচ্ছিলাম। ছেলেটাকে দেখতে অনুরোধ করছিলাম নার্সের কেবিনে গিয়ে। কিন্তু ওঁরা বার বার বলছিলেন, সময় মতো দেখা হবে। যাঁরা বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেকে এ ভাবে মেরে ফেললেন, তাঁদের কি বিচার হবে?’’
অভিযোগ, বড় নার্সিংহোমে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল আরজি কর থেকে। মৃতের ভাই বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনও ডাক্তার আসেননি। আমাকে বলা হয়েছে, ‘পারলে বড় নার্সিংহোমে নিয়ে যাও।’ আমাদের যদি পয়সা থাকত, আমরা সরকারি হাসপাতালে কি আসতাম? এক জনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে আর এক জনকে কি খুন করা উচিত?’’
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর যুবক কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বন্ধ হয়ে যায় প্রস্রাব এবং পায়খানা। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করে। অভিযোগ, সেই সময়েও ডাক্তারের খোঁজে ছোটাছুটি করছিলেন যুবকের বাবা। কিন্তু ডাক্তার ছিলেন না। পরে এক জন এসে যুবকের বুকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাঁর ছেলে মৃত।
মৃতের মা বলেন, ‘‘আমরাও আরজি করের ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চাই। কিন্তু আমাদের বিচার কে দেবে? গরিব বলে কি আমাদের জীবনের দাম নেই?’’
উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট আরজি কর থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। এক মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এর ফলে হাসপাতালগুলিতে সিনিয়র ডাক্তারদের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ। যদিও আন্দোলনকারীরা বার বার দাবি করেছেন, তাঁদের কর্মবিরতির জন্য কোনও হাসপাতালে পরিষেবা থমকে নেই। সব বিভাগই চালু রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে এখনও পর্যন্ত সাত লক্ষ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy