Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতা মতিরুল খুনে ১০০ ঘণ্টা পার, গ্রেফতার ১, রহস্য অনেক

এফআইআরে নাম না থাকা এক জন বাদে আর কাউকে ধরেনি পুলিশ। কেন? শাসক দলের চাপে হাত গুটিয়ে রয়েছে পুলিশ? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।

গ্রাফিক: জিয়া হক।

গ্রাফিক: জিয়া হক।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২১
Share
Save

মুর্শিদাবাদের নওদায় বোমা-গুলি ছুড়ে নদিয়ার তৃণমূল নেতা মতিরুল ইসলাম বিশ্বাসকে খুনের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। নিহতের স্ত্রী যে ১০ জনের নামে অভিযোগ করেছেন, তার মধ্যে দলের একাধিক বড় নেতানেত্রীর নাম রয়েছে। কিন্তু এফআইআরে নাম না থাকা এক জন বাদে আর কাউকে ধরেনি পুলিশ। কেন? শাসক দলের চাপে হাত গুটিয়ে রয়েছে পুলিশ? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।

গত বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় নওদায় খুন হন নদিয়ার নারায়ণপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিনা বিশ্বাসের স্বামী, করিমপুর ২ ব্লক সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি মকিরুল বিশ্বাস। ওই রাতেই তাঁর দেহরক্ষী কনস্টেবলের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে নওদা থানার পুলিশ। পরের দিন, শুক্রবার সকালে নওদা থানায় ১০ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেন রিনা। কিন্তু আগেই মামলা রুজু হয়ে যাওয়ায় পুলিশ তাঁর অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গণ্য করেনি বলে অভিযোগ। তাঁকে ‘এফআইআর কপি’ও দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন: রিনাকে কেন দেওয়া হল না ‘এফআইআর কপি’?

পুলিশ সুপার (সুরিন্দর সিংহ, মুর্শিদাবাদ): রিনা বিশ্বাসের অভিযোগ কনস্টেবলের দায়ের করা অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। চাইলেই তিনি এফআইআরের কপি নিতে পারেন।

প্রশ্ন: কত জন গ্রেফতার?

পুলিশ সুপার: এখনও পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। (ধৃত ইস্রাফিল মণ্ডল ওরফে কিতাব মতিরুলদের পাশের গ্রামের লোক, বাড়িতেও যাতায়াত ছিল, অভিযোগে নাম নেই, আপাতত পুলিশ হেফাজতে)

প্রশ্ন: কত জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?

পুলিশ সুপার: তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ভাবে সংখ্যাটা বলা যাবে না।

প্রশ্ন: রিনা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, কেন তাঁদের কাউকে গ্রেফতার করা হল না?

পুলিশ সুপার: রিনা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছি।

রিনা: চাইছেন ‘সুবিচার’।

রিনা: চাইছেন ‘সুবিচার’।

খুনের পরেই সিআইডি তদন্তের দাবি তুলেছিল পরিবার। পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সোমবার, ২৮ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে যান রিনা। তাঁর অভিযোগ, সুপার দেখা করেননি। পুলিশ সুপারের দাবি, তিনি অফিসেই ছিলেন, কিন্তু রিনা দেখা না করেই শুধু একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়ে ফিরে যান। এর পর কৃষ্ণনগরে গিয়ে রিনা কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পালের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগাম খবর না দিয়ে যাওয়ায় দেখা পাননি, পুলিশ সুপার তখন অফিসে ছিলেন না।

প্রশ্ন: ঘটনা নওদায় ঘটলেও নিহত থেকে অভিযুক্তদের বেশির ভাগ নদিয়ারই বাসিন্দা। কী করছে জেলা পুলিশ?

কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার ঈশানী পাল: নওদা থানা তদন্ত করছে। এখানে যা যা পাওয়া যাচ্ছে তদন্তের স্বার্থে তা আমরা ওদের সরবরাহ করছি। ওরা যা সাহায্য চাইছে, তাও পুরোপুরি করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: নদিয়ার পুলিশ নিজে থেকে কী করছে?

কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ: নদিয়া পুলিশ আলাদা করে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। তবে সন্দেহভাজন ও অভিযুক্তের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।

প্রশ্ন: অন্যতম অভিযুক্ত জেলা পরিষদ সদস্যের সঙ্গে কী যোগাযোগ করা হয়েছে?

কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ: টিনা ভৌমিক সাহার সঙ্গে নদিয়ার পুলিশ এখনও যোগাযোগ করেনি।

টিনা: বলছেন ‘মিথ্যা অভিযোগ’।

টিনা: বলছেন ‘মিথ্যা অভিযোগ’।

তৃণমূল সূত্রের দাবি, টিনা এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছেন যাঁর কলকাতায় দলের উচ্চতম মহলেও গতায়াত আছে। আনন্দবাজার যোগাযোগ করলে টিনা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন। আর এক ওজনদার অভিযুক্ত, মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদের ভাগ্নে হাবিব সেখ খুনের ঘটনার দিন থেকেই ফোন ধরছেন না। মঙ্গলবারও ধরেননি। তবে এই সব নাম জড়িয়ে যাওয়াতেই শাসক দলের তরফে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে।

প্রশ্ন: পুলিশের উপরে কি রাজনৈতিক চাপ রয়েছে?

পুলিশ সুপার (সুরিন্দর সিংহ, মুর্শিদাবাদ): কোনও চাপ নেই। আমরা আমাদের মতো তদন্ত করছি।

প্রশ্ন: এক জন বাদে আর কেউ ধরা পড়ল না কেন? পাঁচ দিন পেরিয়ে গেল, কত দিন এমন চলবে?

পুলিশ সুপার: বিভিন্ন সূত্র ধরে আমরা চেষ্টা করছি প্রকৃত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে।

প্রশ্ন: ধৃত ইস্রাফিলকে জেরা করে কী জানা গেল?

পুলিশ সুপার: কী জানা গিয়েছে তা এখনই তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। সে আমাদের হেফাজতে রয়েছে, তাকে আরও জেরা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: অভিযুক্ত টিনা, হাবিব, ফিরোজ তো সরকারি ভাবে ‘পলাতক’ নয়। তাঁদের সঙ্গে কী পুলিশ যোগাযোগ করেছে?

পুলিশ সুপার: তাঁরা খুনের ঘটনায় জড়িত কি না তার তদন্ত চলছে।

রিনা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ‘সুবিচার’ চেয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। তাঁর মতো তৃণমূলেরও একটা অংশের দাবি, ‘প্রকৃত’ অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্রিয়।

মনে রাখা ভাল

কিছু দিন আগে পুরুলিয়ার ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনাতেও পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়’ বা কোনও একটি পক্ষের হয়ে ‘সক্রিয়’ থাকার অভিযোগ উঠেছিল। তার পরিণতি ভাল হয়নি। সিবিআই সেই খুনের তদন্তে নেমেছে। ওই এলাকায় তৃণমূলের প্রবল ভূমিক্ষয়ও হয়েছে।

তথ্য: মফিদুল ইসলাম ও সুস্মিত হালদার। ফাইল চিত্র।

TMC leader murder Crime

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।